আজ : ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনা পুনঃতদন্তের দায়িত্বে পিবিআই

১৮ বছর আগে চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল র‌্যাবকে। তবে এই মামলার পুনঃতদন্ত র‌্যাবের মাধ্যমে করা আইনসম্মত নয় বলে আদেশ দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। পরে ঢাকা মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা মঙ্গলবার পিবিআইকে দিয়ে এই মামলার পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলাটির বর্তমান বাদী সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ও তার আইনজীবী মাহফুজ মিয়া এ আদেশের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আদেশটি অসীম অন্ধকারে আমাদের কাছে একবিন্দু আলোর মতো। দেখা যাক, এখন সালমান শাহ’র হত্যার তদন্ত কোন পথে যায়।’

জনপ্রিয় এ চিত্রনায়কের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাটি এর আগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের একজন বিচারক র‌্যাবকে দিয়ে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে। মহানগর দায়রা জজ এই শুনানি গ্রহণ ও আদেশের জন্য ওই বিশেষ জজের কাছে নথি পাঠিয়ে দেন।

সে সময় সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী আসামি পক্ষে প্রভাবিত হয়ে রাষ্ট্র নিজেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন আদালতে। কেননা, প্রথম বাদী সালমানের বাবা কমর উদ্দিন মারা যাওয়ার পর নীলা চৌধুরী আগের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করেন। যে কারণে আইন অনুযায়ী কমর উদ্দিনের পরিবর্তে নীলা চৌধুরি বাদী হিসাবে দাঁড়িয়ে যান।

এর আগে বেশ কয়েকবার শুনানি নিয়ে গত ১৯ মে তারিখে মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা বিব্রত বোধ করে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলার নথি পাঠিয়ে দেন। এ আদালতের বিচারক মো. ইমরুল কায়েস গত ২১ অগাস্ট র‌্যাবের মাধ্যমে পুনঃতদন্তের (অধিকতর) আদেশ আইনসম্মত হয়নি উল্লেখ করে বিষয়টি আবারও শুনানি নেওয়ার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে দায়িত্ব দেন।

এর ধারাবাহিকতায় মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা নারাজি আবেদনের ওপর আবারও শুনানি নেন। শুনানির পর সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা, তা নির্ধারণের জন্য র‌্যাবের বদলে পিব্কিআইকে দায়িত্ব দেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের বাসা থেকে চলচ্চিত্র অভিনেতা সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার মা নীলা চৌধুরি বলেন, ‘সালমান শাহর লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। আসামিপক্ষ বলে আসছেন যে সালমান শাহর লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।’

এ ঘটনাকে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা উল্লেখ করে পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা করলেও সালমানের পরিবার বিষয়টিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করে। ঘটনার পর বেশ কয়েকবার একে আত্মহত্যা বলে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও সালমানের পরিবার তাতে নারাজি আবেদন করে পুনঃতদন্ত চায়। প্রায় ১৮ বছর আগের এই মৃত্যুর ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা তা নির্ধারণে এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলাটি আবারও আদালতে ওঠে।

চিত্রনায়ক সালমান আত্মহত্যাই করেছিলেন- বিচার বিভাগীয় তদন্তের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সালমানের মা নীলা চৌধুরী সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে তার ব্যক্তিগত আইনজীবী মাহফুজ মিয়ার মাধ্যমে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে নারাজি দেন।

ওই আবেদন শুনে মহানগর হাকিম ওয়ায়েজ কুরুণী খান ঘটনাটি র‌্যাবকে দিয়ে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিলে র‌্যাবের এএসপি ইয়াসিন আরাফাত তদন্তে নেমেছিলেন বলে নথিপত্র সূত্রে জানা যায়।

এর মধ্যে গত ৬ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু ওই মামলায় হাকিমের পুনঃতদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন আবেদন করেন। তার ওই আবেদনে পুনঃতদন্ত আটকে যায়।

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর নারাজিতে আজিজ মোহাম্মাদ ভাইসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অপর ১০ জন হলেন- সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক, সামিরার মা লতিফা হক লুসি, রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, সহকারী নৃত্যপরিচালক নজরুল শেখ, ডেভিড, আশরাফুল হক ডন, রাবেয়া সুলতানা রুবি, মোস্তাক ওয়াইদ, আবুল হোসেন খান ও গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা বেগম।

এর আগে নীলার আইনজীবী মাহফুজ মিয়া বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ কোনওদিন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। অথচ পিপি এ রকম আবেদন করে সেটাই করলেন। তার ভূমিকা উদ্দেশ্যমূলক, প্রশ্নবিদ্ধ ও বেআইনি।’

নীলা চৌধুরীর অপর আইনজীবী ফারুক বলেন, ‘এর আগে শুনানির সময় রিজভী আহমেদ নামে এজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ওই জবানবন্দিতে রিজভী বলেছিলেন, সালমানকে হত্যা করা হয়। তিনি অন্য আসামিদের সাহায্য করার জন্য সালমানের পা চেপে রেখেছিলেন। অপর একটি মামলায় হাকিমের কাছে রিজভী সালমান শাহ হত্যায় সালমানের স্ত্রী সামিরা, সামিরার মা, ডন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সম্পৃক্ত করে জবানবন্দী দেন।’

এর আগে বিষয়ে পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেছিলেন, ‘সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার বাদী ছিলেন তার বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী, যিনি মারা গেছেন। নীলা এই মামলার বাদী নন। এই অবস্থায় নীলা চৌধুরী মামলার বাদী হিসেবে নারাজি দিতে পারেন না।’

আবদুল্লাহ আবুর এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে নীলা চৌধুরীর আইনজীবী মাহফুজ মিয়া বলেছিলেন, ‘সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেছিল পুলিশ। সালমানের বাবা ঘটনার স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ হিসেবে পুলিশের তদন্তে নারাজি দিয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের আসামি করতে আদালতে আবেদন করেছিলেন। সালমানের বাবার নারাজির প্রেক্ষিতে কোনও তদন্তে ঘটনাটি হত্যা বলে বের হয়ে আসলে এই অপমৃত্যুর মামলা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হতো।’

মাহফুজ বলেছিলেন, ‘সালমানের বাবা কমর উদ্দিন মারা যাওয়ার পর এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে করা বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন বিপক্ষে গেলে মৃতের মা নীলা চৌধুরী স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ হিসেবে নারাজি দিয়েছিলেন।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.