পয়লা বৈশাখ আসতে আরো এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু বাজারে ইতোমধ্যেই বৈশাখী উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য সবাই ছুটছেন ইলিশের দিকে। সুযোগ বুঝে রুপালি ইলিশের দামটা বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্ষেত্রেবিশেষে দ্বিগুণ হয়ে গেছে একেকটা ইলিশের দাম। বিক্রেতাদের আশঙ্কা, পয়লা বৈশাখ ঘনিয়ে আসায় এখন প্রতিদিনই ইলিশের দাম বাড়বে।
গতকাল রাজধানীর ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের একেকটি ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগে এ সাইজের ইলিশ এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান বিক্রেতারা। তারা বলছেন, জাটকা ধরা ঠেকাতে নদীতে অভিযান চলছে। ফলে সরবরাহ কম। কিন্তু পয়লা বৈশাখ ঘনিয়ে আসার কারণে ইলিশের চাহিদা অনেক বেশি। স্বাভাবিক কারণে দামও তুলনামূলক বেশি। অবশ্য হিমাগারে রাখা ইলিশ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি ধরা মাছের চেয়ে সেগুলোর দাম কিছুটা কম। আবার চট্টগ্রামের ইলিশ বরিশাল ও চাঁদপুরের ইলিশের চেয়ে কম দামে মিলছে বলেও জানান ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে প্রতি বছরই ইলিশের চাহিদা বাড়ে। এ কারণে বাড়তি বাজার ধরতে ব্যবসায়ীরা হিমাগারে ইলিশ রেখে দেন। এ সময় জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকায় নদীতে অভিযান চালায় স্থানীয় প্রশাসন। ফলে দাম বেড়ে যায়। অবশ্য ইলিশ রক্ষার জন্য কয়েক বছর ধরে পয়লা বৈশাখে মাছটি না কেনার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রচার চলছে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু হুজুগে বাঙালি বলে কথা। কোনো বাধাই মানতে নারাজ। পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ তাদের চাই-ই চাই।
তবে ছোট আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম দামে। আকারে একটু বড় হলেই দাম অনেক বেশি। কেজিতে তিনটি হবে এমন আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। একেকটি ৮০০ গ্রাম ওজনের একহালি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে চার হাজার টাকা। তবে হিমাগারের হলে সেটা সাড়ে তিন হাজার টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। দর কষাকষি করলে কিছুটা কমে কেনা যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, হিমাগারের বড় ইলিশের মধ্যে যেটা কিছুদিন আগে রাখা হয়েছে, সেটার কেজিপ্রতি দর দেড় হাজার টাকার মতো। একই মাছ দু-এক দিন আগে ধরা হলে দর তিন হাজার টাকা হাঁকা হচ্ছে। গত দু’দিনে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে বলেও জানান তারা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতোই বাজারে সবজির সরবরাহ কম। বিক্রেতারা জানান, শীতের সবজি শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং বর্ষাকালীন সবজি আসতে শুরু না করায় সবজির দাম খুব একটা কমছে না। বাজারে বর্তমানে বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এক সপ্তাহে তা কেজিপ্রতি ১০ টাকার মতো কমেছে। বাজারভেদে গতকাল ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, করলা ও বরবটি ৫০ থেকে ৭০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতি পাঁচ কেজিতে ১০ টাকা কমেছে বলেও জানান বিক্রেতারা। কাওরানবাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ পাঁচ কেজি ১২০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। খুচরা বাজারে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বয়লার মুরগির কেজি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা দরে। তবে লাল লেয়ার মুরগির দাম কিছুটা কমে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহে ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। আর পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা কেজি। খাসির গোশতের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গরুর গোশতের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে। পাইকারিতে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা।