আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

অগ্নি দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ কেন ঝুঁকিপূর্ণ?

বাংলাদেশে গার্মেন্টস কারখানা, শিল্প, বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন, শপিং মল সবক্ষেত্রে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটছে। আগুন লেগে বহু মানুষের মৃত্যুর নজির রয়েছে।
এ সপ্তাহে বাংলাদেশে বড় দুটি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে যার একটি শপিং মলে আর অন্যটি পোশাক কারখানায়।
ঢাকার ব্যস্ত শপিং মল বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগে গত রোববার। মার্কেটের ৬ তলার আগুন পুরো ভবনে ছড়াতে না পারলেও পুড়ে গেছে বহু দোকান।
আর শুক্রবার আগুনে পুড়ে গেছে গাজীপুরের একটি সুতা কারখানা। ঐ আগুন পুরোপুরি নেভাতে দমকল কর্মীদের লেগেছে ৩৫ ঘণ্টা।
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন্স এন্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, বাংলাদেশে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, ফ্যাক্টরি সবক্ষেত্রেই আগুন মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি এবং তড়িৎ পদক্ষেপের ঘাটতি দেখা যায়।

ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন্স এন্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ।
“ফায়ার ফাইটিং শুধু ফায়ার সার্ভিসের কাজ না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা, প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। আর প্রতিটি সংস্থার নিজস্ব টিম থাকা দরকার যাতে আগুন লাগলে দশ থেকে বিশ মিনিট ফাইট করতে পারে। কিন্তু সেটা আমাদের এখানে নাই”।
“দেখা যায় নামে মাত্র টিম রয়েছে যাদের কোনো প্রফেশনাল ট্রেনিং নাই, ইক্যুইপমেন্ট নাই, পারসোনাল প্রটেকশন গিয়ার নাই। অনেক বিল্ডিংয়ে ফায়ার ইক্যুইপমেন্ট লাগানো হয়েছে কিন্তু ঠিকভাবে মেইনটেনেন্স করা হচ্ছেন না। আবার লোকজন জানেও না কিভাবে এটা ব্যবহার করতে হবে”-বলে মেজর শাকিল নেওয়াজ।
যেহেতু পোশাক কারখানাতেই হাজার হাজার মানুষ একসাথে কাজ করে তাই সেখানে আগুনে প্রাণহানির আশঙ্কা সবচে বেশি।
২০১২ সালে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় শতাধিক শ্রমিক।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সলিডারিটি সেন্টারের তথ্য জানাচ্ছে তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের পর এবছর এপ্রিল পর্যন্ত শতাধিক অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৩৪ জন মারা গেছে।
তাজরিন এবং রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশে পোশাক খাতের অগ্নি এবং ভবন নিরাপত্তা জোরদারে কাজ চলছে।

অ্যাকর্ডের প্রধান নির্বাহী রব ওয়েস জানাচ্ছেন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হলেও এখনো তাদের উদ্বেগ কাটেনি।
“আমরা ১৬শ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করেছি। যেখানে সবমিলিয়ে ৮৭ হাজার ত্রুটি পাওয়া গেছে এবং এর মধ্যে ৫৫ হাজার ত্রুটি সংশোধিত হয়েছে। এটা অবশ্যই অগ্রগতি তবে তা যথেষ্ট নয়। কারণ সবগুলো আরো দেড় বছর আগেই সংশোধন হওয়ার কথা ছিল”।
এ নিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “ফায়ার ডোর, স্প্রিংকলার এগুলো একটা রানিং ফ্যাক্টরিতে লাগাতে সময় লাগে। তবে আমি মনে করি দুর্বলতা আমাদের যেমন ছিল যে প্রথম দিকে আমরা কোথ্থেকে জিনিসগুলো পাব সেটা জানা ছিল না। আবার একর্ডেরও ম্যানপাওয়ারের অভাব ছিল যে আমরা যখন কোনো প্ল্যান সাবমিট করছি তারা সময়মতো দিতে পারে নাই”।
পোশাক কারখানার নিরাপত্তার জন্য এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৭শ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করা হয়েছে।
যার মধ্যে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের আওতায় আছে ২২শ ফ্যাক্টরি। মিস্টার রহমান জানান, ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এগুলো ত্রুটিমুক্ত হবে।
তবে বাকি দেড় হাজারের মতো ফ্যাক্টরি কতদিনে নিরাপদ হবে তার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বলতে পারেননি।
বাংলাদেশে অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ মাকসুদ হেলালী। তিনি বলেন পোশাক কারখানা ছাড়াও বাংলাদেশে অধিকাংশ

“কয়েক বছর আগে জাপান গার্ডেন সিটিতে আগুন লাগে যেখানে আগুন লাগার পর বাড়ীর লোকেরা উপরে উঠে যায়। এটা হওয়ার কথা না। সেখানে ফায়ার এক্সিট থাকার কথা সেটা হয়নি। মানুষের এই সেন্সটাও নাই সুবিধাও নাই। যে কারণে এগুলো মানুষের জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে”-বলে অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী।
বসুন্ধরা সিটিতে এর আগেও আগুন লেগেছে। মার্কেটের মধ্যে অগ্নি নির্বাপনী যন্ত্রপাতিও দেখা যায়।
এ ভবনের বেলায় মিস্টার হেলালী বলেন, “সবকিছুই আছে মনে হচ্ছে কিন্ত যেটা থাকার দরকার ছিল সেটাই অনুপস্থিত। বসুন্ধরা একটি বড় অট্রিয়াম ভবন। ফায়ারের নিরাপত্তার জন্য এরকম বিল্ডিংয়ে ফায়ার স্প্রিংকলার সিস্টেম থাকার কথা। যেটি ধোঁয়া নির্নয় করলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বাজাবে এবং সেখানে সয়ংক্রীয়ভাবে পানি ছিটাবে”।

অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড হালনাগাদ এবং সেটি মানতে বাধ্য করার জরুরি বলে মনে করেন অধ্যাপক হেলালী।
“বাংলাদেশে বিল্ডিং তৈরির আইনটা তৈরি হয়েছে ২০০৬ সালে। এই আইনগুলো সম্পর্কে মানুষ জানেনা এবং বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে ফায়ারের নিয়মগুলো তারা মেনে চলছে না। বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে ফায়ারের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে বিশেষত বহুতল ভবন তৈরির ক্ষেত্রে অনেকগুলো বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা উল্লেখিত আছে। যেগুলো একেবারেই ওভারলুক করা হচ্ছে”-বলছেন অধ্যাপক হেলালী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.