আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

অ্যামোনিয়া গ্যাসে পরিবেশগত ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু

চট্টগ্রামের আনোয়ারা ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) প্ল্যান্টের রিজার্ভ ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনায় নিসৃত অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিরূপ প্রভাবে পড়েছে পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর। গ্যাস নিঃসরণের ফলে গাছপালার পাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে। মারা গেছে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। এছাড়া গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল মারা গেছে আক্রান্ত এলাকায়।অ্যামোনিয়া গ্যাসে পরিবেশগত ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু

ঘটনা তদন্তে বিসিআইসির ১০ সদস্যের কারিগরি কমিটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
গ্যাস নিঃসরণের ওই ঘটনায় পরিবেশগত যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতর।

অধিদফতরের সিনিয়র রসায়নবিদ মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, অ্যামনিয়া গ্যাস নিঃসরণের কারণে পরিবেশগত যে সব ক্ষতি হয়েছে সেসব নিরূপনে কাজ শুরু করেছে পরিবেশ অধিদফতর। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন, যেসব মৎসচাষীর মাছ মারা গেছে তাদের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, অ্যামেনিয়ার কারণে পানির মধ্যে ক্ষারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দ্রবিভূত অক্সিজেন (ডিও) কমে যাবে, এই কারণে মাছ ও অনান্য প্রাণী মরে যেতে পারে। মাছ মরে যাওয়া খামারের পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, পরীক্ষার পর বলা যাবে কেন মাছ মরে গেলো।

গত ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে কারাখানটির অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ওই ট্যাংকটিতে ৩০০ টন অ্যামোনিয়া গ্যাস সংরক্ষিত ছিল। ট্যাংক বিস্ফোরণের ফলে আনোয়ারাসহ আশেপাশের কয়েক মাইল এলাকাব্যাপী অ্যামোনিয়া গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাসের প্রভাবে অনেক লোক অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

জনসাধারণের ওপর গ্যাসের বিরুপ প্রভাব কমতে শুরু করলেও ২৩ আগস্ট বিকাল থেকে আনোয়ারা উপজেলার রাঙাদিয়া সার কারখানার এলাকার আশেপাশের বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ ও বিভিন্ন জলজপ্রাণী মরে ভেসে উঠতে দেখা গেছে। বিস্ফোরিত ট্যাঙ্কের কাছে অবস্থিত ছোট-মাঝারি গাছপালা মরে গেছে। এসব গাছের সবুজ পাতা কালো হয়ে কুঁকড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, কারখানার পাশের জলাশয়ের সব মাছ মরে ভেসে উঠছে। পাশের নদীর পানি রংও বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। বুধবার থেকে এই দৃশ্য আরও প্রকট হয়ে উঠেছে

আনোয়ারা এলাকার মৎস্য খামারি এএইচ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং পার্টনার শিমুল সেন জানান, কারখানার পাশেই তার বড় খামার রয়েছে। গ্যাসের প্রভাবে খামারের প্রায় কোটি টাকার মাছ মরে ভেসে উঠেছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে সার তৈরির উপাদান অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ পালিত।

তিনি বলেন, অবশ্যই এই ঘটনা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। মানুষ ও কারখানার আশপাশের প্রাণীদের জন্য এটা মারাত্মক ক্ষতির বিষয়। অতিরিক্ত সার দিলে গাছ যেভাবে পুড়ে যায় কারখানার আশপাশের গাছপালাও সেভাবে পুড়ে গেছে। পুকুরের পানির রং বদলে গেছে, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে গেছে। অতিরিক্ত শ্যাওলা সৃষ্টি হওয়ায় মাছ শ্বাস নিতে পারছে না। ধীরে ধীরে আরো অনেক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।

তবে এ বিপর্যয়ে এলাকাবাসীর পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মো. ইকবাল ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

বিসিআইসি চেয়ারম্যান বলেন, ঘটনা তদন্তে ১০ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের রসায়নবিদরা সবসময় আশপাশের এলাকার বাতাস ও পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। অপরিশোধিত পানি নদীতে বা সাগরে ফেলা হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

অপরদিকে মাছ চাষিদের ক্ষতির প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষিরা যেন ক্ষতিপূরণ পায় সে চেষ্টাও করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.