পরিবহনশ্রমিকদের দুই দিনের ধর্মঘট চলাকালে রাজধানীর গাবতলীতে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের করা দুই মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিদের প্রায় সবাই গাবতলীকেন্দ্রিক ট্রাকচালক ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের অধিকাংশই সাধারণ ট্রাকশ্রমিক। সারা দেশে ওই ধর্মঘট হয়েছে মূলত পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের শীর্ষ সংগঠনের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু মামলায় এসব সংগঠনের কোনো কেন্দ্রীয় নেতার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
সারা দেশে পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘট চলাকালে গত মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকাল থেকে গাবতলীতে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকেরা যানবাহন ভাঙচুরের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও পুলিশের রেকার ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেন। বুধবারের সংঘর্ষে একজন পরিবহনশ্রমিক নিহত হন। এসব ঘটনায় বুধবার রাতে পুলিশ দারুস সালাম থানায় দুটি ও এক নারী একটি মামলা করেন।
এজাহারে উল্লেখিত নাম ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার গাবতলী ও তেজগাঁওয়ে ট্রাকশ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিদের বেশির ভাগই আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়ন ও ট্রাকচালকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা। মামলার ১ নম্বর আসামি তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি, ২ নম্বর আসামি আবুল হাসেম সাধারণ সম্পাদক। মামলার আসামি সাদেক হোসেন তুফান, আহমেদ আলী, আবদুস সাত্তার, নসু, আবুল বাশার, কালাম মুন্সী, জুল জালাল, হাজি সুলতান, নাসিরউদ্দিন, লোকমান ফরাজী, শহর আলী, লাট মিয়া, দুলাল, জজ মিয়া, হাবিল সিকদারও ট্রাকচালক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
অতীতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনায় পুলিশ যেসব মামলা করেছিল, সেগুলোতে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের পাশাপাশি তাঁদের মদদদাতা, নির্দেশদাতাদেরও আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কিন্তু এ দুই মামলার ক্ষেত্রে তা হয়নি।
কেবল ট্রাকশ্রমিক নেতাদেরই কেন মামলায় আসামি করা হলো জানতে চাইলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাকশ্রমিকেরাই গাবতলীতে ভাঙচুরের সূচনা করেছিলেন। তাঁরাই দুদিন ধরে গাবতলী অবরুদ্ধ করে রাখেন, বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই তাঁদের আসামি করা হয়েছে।
দুই মামলার এজাহারভুক্ত ৪৬ আসামির কাউকেই গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। দারুস সালাম থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার সৈয়দ মামুন মোস্তফা বলেন, এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে ঘটনার সময় গাবতলী থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছিল। এঁদের মধ্য থেকে যাচাই করে সাতজনকে গতকাল আদালতে পাঠালে তাঁদের এক দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
আদালত সূত্র বলেছে, ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আলমগীর কবির রাজ এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই সাতজন হলেন রফিকুল ইসলাম, আল আমিন, ফজলে রাব্বী, এনামুল হক, হাসানুর, রবিন ও সোহেল। এঁরা বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও চালকের সহকারী।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গাবতলীতে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় সাতজন শ্রমিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। একটি মামলার রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় এই আসামিদের রিমান্ড শুনানি হবে রোববার।
আসামি করা হয়নি ধর্মঘট আহ্বানকারীদের
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির মামলায় বাসচালক জামির হোসেনকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এই রায়ের প্রতিবাদে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা ও পরে খুলনার ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। গত সোমবার ১০ জেলার ওই ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। এদিকে সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে এক ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে সোমবার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ঢাকার একটি আদালত।
১০ জেলার ধর্মঘট নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানের বাসায় পরিবহন নেতাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক চলাকালেই সেখানে ঢাকার রায়ের খবর যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সেক্রেটারি ওসমান আলীর ভাষ্য অনুযায়ী, এ খবর পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ঠিক করেন, মঙ্গলবার থেকে তাঁরা সারা দেশে ‘কর্মবিরতি’ পালন করবেন। ওই বৈঠকে বাস ও ট্রাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ প্রায় ৫০ জন মালিক-শ্রমিকনেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ফোনে আঞ্চলিক নেতাদের ধর্মঘট পালনের নির্দেশ দেন। ওই ধর্মঘট চলাকালেই গাবতলীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনাতেই পুলিশ মামলা দুটি করে। তবে ধর্মঘট আহ্বানকারীদের কারও নাম এজাহারে উল্লেখ নেই।
আসামিদের অধিকাংশ সাধারণ ট্রাকশ্রমিক
![আসামিদের অধিকাংশ সাধারণ ট্রাকশ্রমিক](https://www.rockinrioacademy.com/wp-content/uploads/2017/03/4c121050789b26ce69e6ad0bf95a7062-58b889734965b.jpg)