আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

এগিয়ে নারীরা:অনলাইন বিজনেস :

বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন বিজনেস। ফলে ঘরে থাকা অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এ বিজনেসে। এতে প্রয়োজন নেই বড় পুঁজি কিংবা বিশাল শোরুমের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অল্প পুঁজি দিয়ে অনেকেই শুরু করেছেন ব্যবসা এবং হয়ে উঠছেন সফল উদ্যোক্তা।
বর্তমানে বিজনেসের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম অনলাইন। অর্থাৎ ভার্চুয়াল দুনিয়ার বিকিকিনি। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এবং তাল মিলিয়ে ব্যবসায়ও করছেন।
বিভিন্ন সাইট ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এসব ব্যবসায়ে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তাদের প্রধান কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনেকেই স্বল্পপুঁজি দিয়েই শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়। নেই কোনো বিশাল পুঁজির ভার, নেই কোনো দোকান ভাড়ার ঝামেলা। ফলে কিছু দিন আগপর্যন্ত হাত গুটিয়ে ঘরের কোণে থাকা নারীটিও আজকাল নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। উদ্যোগ নেয়ার সাহস করেন।
পুষ্পিতা চৌধুরী। একটি অনলাইন ব্যবসায়িক সাইটের স্বত্বাধিকারী। নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন ছাত্রাবস্থা থেকেই। কিন্তু বিয়ের পর সংসারের চাপে আর সেটা হয়ে ওঠেনি। কর্মজীবী নারীদের পরিবারের অনেক সমস্যা-বিশৃঙ্খলাও তাকে নাড়া দিত ভীষণভাবে। তাই সাহস করেননি কিছু করার। কিন্তু বর্তমানে ঘরে বসেই সংসার সামলে করতে পারছেন সব কিছু। পরিবারের লোকেরাও সহায়তা করছেন সাধ্যমতো। নিজের একটি আলাদা পরিচয় হয়েছে। আবার সংসারের প্রয়োজনে সাহায্যও করতে পারেন স্বামীর পাশাপাশি। মাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।
এমন অনেককেই পাওয়া গেল, যারা সংসারের প্রয়োজনেই কিছু বাড়তি আয়ের জন্য ব্যবসায়ে এসছেন। তবে পুষ্পিতার মতো পরিবারের সহায়তা ও উৎসাহ পাননি অনেকেই। বাইরের অসহযোগিতা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য তো ছিলই। কেউ কেউ পেরিয়েছেন অনেক বাধার পাহাড়। সে রকমই চড়াই-উতরাই পাড়ি দেয়া প্রথম দিকের একজন নারী উদ্যোক্তা আফরিন বেগম (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, শুরুটা মসৃণ ছিল না।
পণ্য সরবরাহতেও পেরোতে হতো অনেক ঝক্কিঝামেলা। পাইকারি বিক্রেতারা নির্ভর করতে পারতেন না। যারা পরিবারের সহায়তা ও উৎসাহ পেতেন না তাদের কষ্ট ছিল সীমাহীন। অনেক পুরুষই অনলাইনে আজেবাজে কথা বলে থাকেন। গালমন্দ পর্যন্ত করেছেন অনেকে। পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীরাও নানাভাবে পিছিয়ে দিতে চাইতেন প্রতিযোগিতামূলক এ পেশায় আরেকজন প্রতিযোগী বাড়ল বলে। এখন অবস্থা পাল্টেছে। নারীদের পদচারণাই বেশি। পেশা হিসেবেও নিয়েছেন অনেকে। ক্রেতাও বেড়েছে। নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষ ক্রেতাও রয়েছে তাদের।
অনলাইনের আরেকটি উজ্জ্বল দিক হলো প্রায় সব ঘরানার নারীই কর্মমুখর হয়ে উঠছেন এর কল্যাণে। তরুণী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া কিংবা পাস করা শিক্ষিত আধুনিক নারীদের পাশাপাশি স্বল্পশিক্ষিত আটপৌরে গৃহিণীরাও কিন্তু বেশ দলে ভারী। এমনকি ইসলামিক অনেক নারীই এ পেশায় যুক্ত আছেন। আছে এ রকম অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রক্ষণশীল নারীদের দ্বারাই পরিচালিত হয়। যাদের বাইরে কাজ করতে অনীহা থাকে, তারাও ঘরে বসেই যুক্ত থাকেন। আবার এদের ক্রেতারাও রক্ষণশীল পরিবারগুলোই হয়ে থাকে। যারা সময়ে অসময়ে বা সঙ্গীর অভাবে বাইরে কেনাকাটা করতে যেতে পারেন না।
এ রকমই একজন অনলাইন নারী উদ্যোক্তা শাহীনা আক্তার মুন। ইসলামিক আইকন নামক ব্যবসায়িক সাইট পরিচালনা করেন। কথা হয় তার সাথে। জানালেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই তাদের প্রধান বিজ্ঞাপন প্রচারকেন্দ্র। কয়েক বছর আগে তিনজন মিলে মাত্র ৩৫০০ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করেন তাদের ব্যবসায়। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে তাদের ব্যবসায় সাইট। বর্তমানে এক দিনে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্তও আয় হয়। তার সাইটে জামা, জুতো, বোরকা, হিজাব নিকাব, খিমার থেকে শুরু করে নারীদের প্রায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্যই পাওয়া যায়। বাড়তি সুবিধা হিসেবে রেডিমেডের পাশাপাশি টেইলারিং সার্ভিসও দেয়া হয়।
বললেন, শুরুটা হিজাব পরিহিত নারীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে হলেও বর্তমানে সব ধরনের নারীরাই আজ তাদের ক্রেতা। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীরা। তাদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক নারীও আজ ব্যবসায়ী হয়েছেন বলেও জানান তিনি। বিভিন্ন উপলক্ষে বিশেষ দিবসগুলোতে হরেক রকম অফারও দিয়ে থাকেন তারা। আবার, এর মাধ্যমে একটি কমিউনিটিও গড়ে উঠছে। বিভিন্ন সাইট মিলে একত্রে উদ্যোগ নিয়ে মাঝে মাঝে মেলারও আয়োজন করে থাকেন। আর স্বাভাবিকভাবেই মেলাতেও পুরুষের চেয়ে নারীর উপস্থিতি বেশি হলেও পুরুষ ক্রেতাও কম নয়।
নারীসমাজে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া এ পেশা সম্পর্কে কী ভাবছেন আমাদের বিজ্ঞজনেরা। তা জানতে কথা বলি সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসিরের সাথে। এটি খুবই ভালো সঙ্কেত আমাদের সমাজের জন্য। সমাজের বৃহৎ একটি অংশকে অনগ্রসর রেখে, কর্মবিমুখ রেখে সমাজের জাতির উন্নয়ন হয় না। মেধার ব্যবহার জরুরি। পারিবারিক দায়দায়িত্ব বজায় রেখেও নারীরা এগোতে পারছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর চেয়ে সুখের আর কী হতে পারে! এখনো নারীদের নতুন কিছুর শুরুকে বাঁকা করে দেখা হয়। এটাও আমাদের একধরনের ভ্রান্ত ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তবে কেটে যাবে আশা করি সবার সম্মিলিত প্রয়াসে।
ফাহমিদা খাতুন সফল একজন উদ্যোক্তা। কক্সবাজার থেকে নিজের ব্যবসায় সাইট পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, এ মাধ্যমে ব্যবসায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্যই যথেষ্ট লাভজনক ও সুবিধাজনক। বিশেষ করে নারীদের জন্য। তার সাথে অনেকেই কাজ করছেন। তিনি এগোচ্ছেন ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে। তার আন্ডারে বেশ কিছু নারী-পুরুষ কাজ করছেন। সেলাই, হাতের কাজ, হস্তশিল্প, বিপণন ইত্যাদি কাজে নারীদের যুক্ত করার ফলে অনগ্রসর নারীদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। তিনি একটি মজার বিষয় জানান, অনেক পুরুষ বাঁকা চোখে দেখলেও অনেক পুরুষই তাদের উৎসাহিত করেছেন। তাদের সাথে কাজও করছেন। যেমন ডেলিভারি বয়, সাপ্লায়ার, সার্ভিসম্যান এ রকম নানান পরিভাষাগত উপপেশায় সব পুরুষই কাজ করেন। নারী উদ্যোক্তাদের অধীনেই কাজ করেন এবং সাবলীলভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সাথেই কাজ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.