প্রতিনিধি: পিরোজপুরের জিয়ানগরে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পূত্র উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীর হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সন্মাননা নেয়ায় এবং ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করাকে কেন্দ্র করে ইন্দুরকানি থানার ওসিকে প্রত্যাহারের পর এবার ইউএনওকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বাচ্চুকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সাঈদী পূত্রকে ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতির ঘটনায় তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসুদ সাঈদীকে বিজয় দিবসের ক্রেস্ট প্রদান করায় ইউএনও জাকির হোসেন বাচ্চুকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয় বলে জানা যায়। এঘটনায় বরগুনার বামনা উপজেলায় তাকে ইউএনও হিসেবে বদলী করা হয়েছে বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে।
সাঈদী পূত্রের হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পুরস্কার ও সন্মাননা নেয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুক) এবং মিডিয়া অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃস্টি হওয়ায় ১৬ ডিসেম্বরের মহান বিজয় দিবসে সাঈদী পূত্র মাসুদ সাঈদীকে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ নিয়ে সমালোচনার মুখে ১৯ ডিসেম্বর সোমবার ইন্দুরকানি থানার ওসি কেএম মিজানুল হককে পিরোজপুর পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এর ২দিনের মাথায় একই ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বাচ্চুকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হল ।
এব্যাপারে ইউএনও সাংবাদিকদের জানান, আমি বরিশালে ৩দিনের প্রশ্ক্ষিনে এসেছি। এখানে বসে আমি স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত অফিসিয়াল কাগজ পত্র হাতে পায়নি।
এদিকে ঐ অনুষ্ঠানে উপজেলা আ”লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য এ ঘটনায় উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ২০ ডিসেম্বর দুপুরে পিরোজপুর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সূত্রে জানা যায়, বিজয় দিবসে মাসুদ সাঈদীর নেতৃত্বে র্যালী, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ, পায়রা উড়ানো এবং কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করানো হয়। এরপর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষে মাসুদ সাঈদীর হাত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মননা প্রদান করেন। এ অনুষ্ঠানের ছবি তার (মাসুদ সাঈদী) ফেসবুকে পোস্ট করেণ এবং স্ট্যাটাস দেন। তিনি তার পোস্টকৃত ছবির স্টাটাসে, “মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জিয়ানগর উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান” লিখেন।
স্টাটাসে, পুরস্কার নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব বেলায়েত হোসেন, বতর্মান উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বপন কুমার রায়, সাবেক কমান্ডার মাহবুবুল আলম হাওলাদার (আমার অব্বার মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী), মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার ফকির। উপস্থিত আছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বাচ্চু, ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মিজানুল হক, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এ্যাড. এম মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মৃধা মো. মনিরুজ্জামানসহ মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ। একই ভাবে পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা অডিটরিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতির একাধিক ছবি নিজের আইডিতে পোস্ট করে স্ট্যাটাস দেন তিনি।আর এ পোস্ট ও স্ট্যাটাস নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
জিয়ানগরে বিজয় দিবসের এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, দেশের বিশিস্ট ব্যক্তিবর্গ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহনকরী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা এ ব্যাপারে ফেইসবুকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন। বিষয়টি গোটা পিরোজপুর জেলা জুড়ে এখন “টক অব দ্যা টাউন” এ পরিনত হয়েছে। এমনকি স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী দেশের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ এতে ধিক্কার জানাচ্ছেন। আর এ কারনে মিডিয়া অঙ্গনেও বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনার ঝড়। তবে সাঈদী পুত্রের নিজের ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত ছবি ও স্ট্যাটাস মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উদ্দেশ্য মুলক ভাবে বিতর্কিত করার সামিল বলে উপজেলা আঃ লীগের সাধারন সম্পাদক মৃধা মোঃ মৃধা নিরুজ্জামান সহ অনেকে মন্তব্য করেন ।