আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

এরা কারা জিম্মির হাত থেকে মুক্তি চায় সাধারণ মানুষ।

মোঃ বশির আহমেদ : বরিশাল -পটুয়াখালী মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চেক পোস্টের নামে বাস মালিক সমিতির যাত্রী হয়রানী বন্ধ হচ্ছে না। বরং তাদের এই কার্যক্রম ক্রমশ বেড়েই চলছে। ফলে এ নিয়ে কদিন পর পরই ঘটছে মাহেন্দ্র এবং বাস শ্রমিকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা। যার খেসারত গুনতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।সবশেষ শুক্রবার ভোরেও ঘটেছে একই অপ্রীতিকর ঘটনা। চেক পোস্টের নামে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাত্রী বোঝাই থ্রি-হুইলার (মাহেন্দ্র) থামিয়ে চালকদের মারধর এবং গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে মালিক সমিতির লোক জনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে মাহেন্দ্র শ্রমিকদের পাল্টা হামলা এবং ভাংচুরের ঘটনায় যাত্রী এবং সমিতির দুই নেতা আহত হয়েছেন। দুই গ্রুপের পাল্টা পাল্টি হামলায় ৫টি বাস, তিনটি মাহেন্দ্র ভাংচুর এবং দুই পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।এদিকে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে টানা তিন ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ রাখেন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের। পরে ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।যদিও শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে সংঘটিত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ পাল্টা পাল্টি অভিযোগ করেছে। ঘটনার জন্য তারা একে অপরকে দুষছে। এমনকি এ নিয়ে দুই পক্ষই মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে আগামী রোববার বাস মালিক এবং থ্রি-হুইলার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন।হামলার শিকার মাহেন্দ্র শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ‘বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে সকাল ৬টার পরে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ। সে জন্য ছয়টার আগে কিছু মাহেন্দ্র বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে বাকেরগঞ্জ এবং নলছিটিসহ আশপাশের এলাকায় যায়।তারা অভিযোগ করে বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলের বিষয়টি তদারকি করে ট্রাফিক বিভাগে। কিন্তু তাদের অবর্তমানে ভোর ছয়টার আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চেক পোস্ট বসিয়ে মাহেন্দ্র চালক এবং যাত্রীদের হয়রানির পাশাপাশি চাঁদাবাজি করে বাস মালিক সমিতি। কোন কোন সময় তারা সড়কে মাহেন্দ্র থামিয়ে চাকা ফুটো করে দেয় এবং শ্রমিকদের মারধর করে।এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকা থেকে আসা লঞ্চ যাত্রীদের নিয়ে বাকেরগঞ্জ ও নলছিটি’র উদ্দেশে রওনা হয় তিনটি মাহেন্দ্র। এর আগে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির পক্ষে বাবু, নাসির মৃধা, মতি, অভি ও কালুসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবৈধ চেক পোস্ট বসান। ওই তিনটি মাহেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে যাওয়ার পথে মালিক সমিতির চেক পোস্ট তাদের গতিরোধ করে। পরে মহাসড়কে যাত্রী পরিবহনের অপরাধে মাহেন্দ্র’র চালক লাবলু, মনোয়ার এবং নূরুকে মারধরসহ যাত্রী থাকাবস্থায় তিনটি মাহেন্দ্র’র সামনের গ্লাস ভাংচুর করে।
তারা বলেন, ‘ঘটনাটি রূপাতলীতে অবস্থানরত মাহেন্দ্র শ্রমিকদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা এসে মালিক সমিতির চেক পোস্টের নামে মাহেন্দ্র শ্রমিকদের উপর হামলাকারীদের উপর পাল্টা হামলা করেন। তবে কোন বাস ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি শ্রমিক নেতাদের।মাহেন্দ্র শ্রমিকরা দাবি করে বলেন, ‘মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলে বাধা কিংবা চেক পোস্ট বসালে পুলিশ বসাবে। কিন্তু সেখানে বাস মালিক সমিতি অবৈধভাবে চেক পোস্ট বসিয়ে যাত্রী এবং শ্রমিক উভয়কেই হয়রানি করছে। তারা নিজেরা আইন হাতে তুলে নিয়ে শ্রমিকদের মারধর করছে বলে অভিযোগ তুলে শ্রমিক নেতারা বলেন, ‘সম্প্রতি লঞ্চ ঘাট এলাকার লোকমান নামের এক মাহেন্দ্র চালককে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন বাস মালিকরা। এই ঘটনায় মামলা করতে গেলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরে মালিক সমিতির নেতারা মাত্র ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়। শুক্রবারের ঘটনায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে সেখানে পুলিশের কতটুকু সহযোগিতা পাওয়া যাবে সে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তারা।তবে রূপাতলীস্থ বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শুক্রবারের ঘটনাটি পুরোপুরি সাজানো এবং পূর্ব পরিকল্পিত। কি কারণে তারা এই হামলা করেছে সেটা আমার বোধগম্য নয়। হতে পারে একটি চক্র রয়েছে তারা বরিশালের বাইরে থেকে আসা মাহেন্দ্র মহাসড়কে চলাচল করতে না পারায় শুক্রবার সকালে মতিন হাওলাদার ও সুলতান হাওলাদার নামের দুই বাস মালিককে কুপিয়ে জখম করেছে। এসময় পাঁচটি বাসের গ্লাস ভাংচুর করে তারা। এতে বাসে থাকা কয়েকজন যাত্রী আহত হন। তারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত দু’জন মালিককে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, হামলার ঘটনা মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সকাল ৭টার দিকে তারা দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এসময় তারা মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধসহ দুটি দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে সকাল সোয়া ১০টার দিকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। পাশাপাশি আগামী রোববার দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মহাসড়কে অবৈধভাবে চেক পোস্ট প্রসঙ্গে বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমাদের বাসে যাত্রী কম ওঠে। তার মধ্যে মাহেন্দ্রগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। অথচ মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ। এগুলো চলাচল করা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের বাধা দেয় না। এ কারণে আমাদের সমিতি চেক পোস্ট বসিয়ে বিষয়টি তদারকি করে। তদারকির নামে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান মালিক সমিতির এই নেতা।
এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘বাস মালিকরা অভিযোগ করেছেন তাদের উপর মাহেন্দ্র শ্রমিকরা হামলা করেছেন। এতে বাস ভাংচুর এবং মালিক ও কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.