আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

গুলিস্তানে উচ্ছেদ নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ

রাজধানীর গুলিস্তানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কর্মচারিদের হামলায় বেশ কয়েকজন দোকান কর্মচারি ও হকার আহত হয়। পরে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রাস্তা ও ফুটপাতে থাকা দুই শতাধিক দোকান ভেঙে গুড়িয়ে দেয় ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে কয়েক লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে হকাররা অভিযোগ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ ও মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের পাতাল মার্কেটে অভিযান চালায়। মার্কেটের ভিতরে হাঁটার রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর অভিযোগে কয়েকজন দোকান মালিককে অর্থ জরিমানা করেন আদালত। এ সময় পাতাল মার্কেটের সভাপতি হাজী আনোয়ার হোসেন ও তার লোকজন আদালতের কার্যক্রমে বাধা প্রদান করেন। উচ্ছেদ ও অর্থ জরিমানা নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। উচ্ছেদ কাজে বাঁধা দেয়ার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত হাজী আনোয়ারকে আটক করে নগর ভবনে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মাকের্টের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। আটক সভাপতির মুক্তির দাবিতে তারা পাতাল মার্কেট বন্ধ করে উপরের রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় দ্বীপন পরিবহনের দুটি বাস ভাঙচুর করে তারা। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগর ভবনে যায়। সেখানে নগর কার্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভ করে তারা।
খবর পেয়ে মেয়র সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ও পুলিশ একযোগে দোকান কর্মচারিদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। দোকান কর্মচারিদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
তাড়া খেয়ে দোকান কর্মচারিরা গুলিস্তানের দিকে যেতে থাকলে তাদের পিছু ধাওয়া করে কয়েকজনকে বেধড়ক পিটুনি দেয় পুলিশ ও কর্মচারিরা। এ সময় নগর ভবনে থাকা সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী ও ঠিকাদাররাও তাদের সাথে যোগ দেয়।
দোকান কর্মচারিদের অনেকে ফুটপাত ও ওসমানি উদ্যানে আশ্রয় নিলে তাদেরকেও খুঁজে খুঁজে পিঠুনি দেয় তারা। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ছবি তোলা ও ভিডিও করার কাজেও বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
মেয়রের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার এলাকায় ব্যাপক শোডাউন দিয়ে আবার নগর ভবনে ফিরে আসে।
মেয়র এ সময় বলেন, কিছু দুর্বৃত্ত নগর ভবনে ঢুকে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল, এ কারণে পুলিশ ও নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তাদের ধাওয়া দিয়েছে।
বেলা আড়াইটার দিকে মেয়রের নির্দেশে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদের নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ ও মামুনুর রশীদ গুলিস্তান এলাকায় ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন।
এ সময় মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল।
গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটের সামনের রাস্তা ও মহানগর নাট্যমঞ্চ সংশ্লিষ্ট গুলিস্তান পার্কের পশ্চিম পাশের প্রাচীর ঘেষে ফুটপাতে থাকা দুই শতাধিক দোকান পাঁচটি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়।
আচমকা এ অভিযানের আগে কোনো সময় না পাওয়ায় মালামাল সরাতে পারেননি হকাররা। এ কারণে তাদের অনেক মালামাল লুট ও নষ্ট হয়ে যায়।
জাহাঙ্গীর নামে এক হকার নেতা বলেন, সমস্যা হয়েছে পাতাল মার্কেটের লোকজনের সাথে, অথচ আমাদের উপর নির্যাতন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। হঠাৎ অভিযান চালানোয় অনেক মালামাল নষ্ট ও লুটপাট হয়ে গেছে। প্রতিজন হকারের পাঁচ থেকে ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানকালে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফী, হুমায়ুন কবির, ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন, আনিসুর রহমান, ওমর বিন আব্দুল আজিজ, মোস্তবা জামান পপি ও তামিমের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা দফায় দফায় গুলিস্তানে শোডাউন করে।
এ সময় লাটিসোটা নিয়ে তারা হকারদের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় বেশকিছু হকার আহত হয়।
অভিযানের ছবি তোলায় কয়েকজন পথচারীও তাদের হাতে নিগৃহীত হয় ও তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। হকাররা কয়েকদফা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মেয়রের নেতৃত্বে আবারো ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারি ও নেতাকর্মীরা গুলিস্তানে শোডাউন করে।
পরে গোলাপশাহ মাজার মোড়ে এক সমাবেশে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
তিনি আরো বলেন, গুলিস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ এ পথ দিয়ে চলাচল করে। তাই এ এলাকার ফুটপথ পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাসহ যা যা করা দরকার সব করা হবে।
অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান থাকবে জানিয়ে মেয়র বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নাগরিকদের অসুবিধা মেনে নেব না। উচ্ছৃঙ্খলভাবে কেউ রাস্তা দখল করতে চাইলে তাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে হকাররা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.