বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একটি সার কারখানা থেকে অ্যামোনিয়া ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ড্যাপ কারখানায় একটি অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরিত হয় সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে।
অ্যামোনিয়ার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই অনেককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
বাতাসের সাথে দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাসটি চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা থেকে হালিশহর পর্যন্ত বিরাট এলাকা জুড়ে কুয়াশার মত ছড়িয়ে পড়ে, ফলে অনেকের মধ্যেই রাতে আতঙ্ক দেখা দেয়।
তবে সকাল নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেসবাহ উদ্দিন।
“অ্যামোনিয়া এখন আর নিঃসৃত হচ্ছে না। তবে আশেপাশে পানিতে হয়তো কিছুটা অ্যামোনিয়া মিশ্রিত হয়েছে, সেখানে মাছ মারা গেছে”, বলেন মেসবাহ উদ্দিন।
অ্যামোনিয়ার কারণে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে যারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তারা এখন সুস্থ আছেন বলে জানান হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জালাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, রাতে ৫২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয় যাদের মধ্যে ৩-৪ জনকে রাতেই ছেড়ে দেয়া হয়। মঙ্গলবার দিনে ৭-৮ জনকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ড্যাপ কারখানার যে ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হয়েছে সেখানে প্রায় ২০০ টন তরল অ্যামোনিয়া ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বিস্ফোরণে ট্যাংকটি ছিটকে খানিকটা দূরে পড়ে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
কর্ণফুলী নদীর তীরে ওই কারখানায় বিস্ফোরণের পরদিন প্রচুর মাছও ভেসে উঠতে দেখা গেছে
“আশেপাশের গাছপালার পাতা জ্বলে যাচ্ছে, জলাশয়ের মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে, পার্কিংয়ে রিসাইক্লিং করা পানি খেয়ে দুইটা গরু মারা গেছে বলে আমরা দেখে আসছি”, বলেন ঘটনাস্থলের পাশে আনোয়ারার বারাসাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম শাহ।
মি. শাহ বলছেন, বড় আকারে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা আগে না হলেও প্রায়সময়ই স্বল্প আকারে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে এবং সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার মত ব্যবস্থাও সেখানে নেই।
গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার পর পার্শ্ববর্তী পটিয়া থানা এবং চট্টগ্রাম শহর থেকে ফায়ার সার্ভিস এসে পানি ছিটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এসময় নিকটবর্তী কাফকো সার কারখানা থেকে মাস্ক সরবরাহ করা হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহমদ খান বলছেন, রাসায়নিক পদার্থ নি:সরণ ঠেকাতে তাদেরও বেশ বেগ পেতে হয় এবং ড্যাপের কারখানাটিতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেশ ঘাটতি ছিল।
“আমাদের যতটুকুই ব্যবস্থা আছে সেটা দিয়ে আমরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছি। এসময় কারখানার কেউই ছিল না। আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানি দেয়া হয়েছে এবং আমাদের কয়েকজন কর্মীও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে আমি দেখলাম যে কারখানার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল না”, বলেন মি. খান।
আনোয়ারার ড্যাপ কারখানাটি সরকারি রাসায়নিক শিল্প কর্পোরেশনের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান।