বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইনের কারণে নাগরিক সমাজের কথা বলার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপারসন হোসে কার্লোস উগাস। আজ সোমবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছেন।
দুদিনের ঢাকা সফর শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইয়ের চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমরা সরকারের শত্রু নই। আমরা দুর্নীতিবাজদের শত্রু, দুর্নীতির শত্রু। দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই।’
৬ অক্টোবর জাতীয় সংসদে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই আইনের ১৪ ধারায় বলা আছে, সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক ও অশালীন মন্তব্য করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ কারণে এনজিও ব্যুরো সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।
এ সময় টিআইবির চেয়ারপারসন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, বিলের ১৪ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে নাগরিক ও সংগঠনের জন্য অনেক অধিকার আছে। এ আইনে সেই অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। তিনি বলেন, নতুন আইন বলা হয়েছে, সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক ও অশালীন বক্তব্য দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এখানে বিদ্বেষমূলক এবং অশালীন বক্তব্যের সংজ্ঞা কী, সেটা ব্যাখ্যা করা হয়নি। তাই এর অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।
নতুন এ আইন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে হোসে কার্লোস উগাস বলেন, ‘নাগরিক সমাজ কীভাবে কাজ করে, তার একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে। আমি মনে করি, আইনের কারণে নাগরিক সমাজের কথা বলার সুযোগ সীমিত হয়ে যাবে। প্রত্যাশা করি, সরকার সুযোগটি সীমিত করবে না, কারণ আমরা শুধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি।’
বাংলাদেশে দুদকের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো ঠিক নয়। মানুষের আস্থা ফেরাতে দৃশ্যমান ব্যবস্থা থাকতে হবে। ছোট ছোট দুর্নীতিবাজের পরিবর্তে বড় দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
টিআই চেয়ারপারসন বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বৈশ্বিক দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারগুলোকে সমন্বিত ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন ত্বরান্বিত করতে বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ের পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ই তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
সফরকালে টিআই চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক গওহর রিজভী, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এবং টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামালসহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সুশীল সমাজের সদস্য ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।