আনন্দঘন পরিবেশে বন্দিদের পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে নতুন কারাগারে স্থানান্তরের পরও ‘স্বস্তিতে’ নেই কারা কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে কারাগারের ৩৬টি সমস্যা চিহ্নিত করে তা নিয়ে সভা হয়েছে; খোঁজা হচ্ছে সমাধানের পথ। সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
চিহ্নিত সমস্যার মধ্যে নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি ছাড়াও নির্মাণজনিত কিছু সমস্যা রয়েছে বলে জানা গেছে।
২৯ জুলাই পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের দুইশ বছরের পুরনো কারাগার থেকে ৬ হাজার ৫১১ জন বন্দিকে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কারাগারে নেওয়া হয়।
শুরুতে নতুন ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে বন্দিদের অনেকে আনন্দিত হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে ধরা পড়ছে নানা ত্রুটি। আর তাতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বন্দিদের ছাড়াও তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনদের।
অবশ্য বন্দি স্থানান্তরের দিনই কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন অধিদপ্তরে সাংবাদিকের কাছে দাবি করেছিলেন, চারমাস আগে একটি কমিটি গঠন করে নির্মাণত্রুটি সমাধান করা হয়েছে।
প্রায় ৩১ একর জমির উপর নির্মিত তুলনামূলকভাবে খোলামেলা এই কারাগারের ছয়টি ছয়তলা ভবনে হাজতিদের থাকার ব্যবস্থা। একই ধরনের দুটি ভবনের প্রতি তলায় ৪০টি করে কক্ষ রয়েছে; প্রতি কক্ষে রয়েছে ১৩ জন করে বন্দি রাখার ব্যবস্থা।
দর্শনার্থীদের ভোগান্তির চিত্র শুক্রবার সরেজমিনেও দেখা যায়। বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা অনেকেই জানিয়েছেন তাদের খেদের কথা।
যাত্রাবাড়ী থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে বন্দি স্বামীর (বন্দির নাম বলতে রাজি হননি) সঙ্গে দেখা করতে এসে ফরিদা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার স্বামী নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারেও ছিলেন। সেখানে প্রায়ই তিনি তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করেছেন।
“কিন্তু কেরানীগঞ্জ কারাগারে দর্শনার্থীর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই, আর বন্দির সঙ্গে দেখা করলেও ছোট ছিদ্র দিয়ে কারো কথা কেউ শুনতে পান না।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, সমস্যাটি তাদের নজরে এসেছে; কারাগারে বিদ্যমান সাক্ষাৎ কক্ষ চার তলা করার কথা ছিল, তবে করা হয়েছে আরো দুইতলা কম।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবনটি ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে দ্রুত চার তলায় উন্নীত করার পাশাপাশি আরেকটি চারতলা ভবন স্থাপনে আবেদন করা হয়েছে।
এ কারাগারে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের জন্য নেই অপেক্ষাকক্ষ; ফলে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে কারাগারের সামনে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে দেখা যায় তাদের।
নতুন কারাগারে অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে, রান্নাঘর ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে ওঠা, বন্দিদের গোসলের পর্যাপ্ত স্থানাভাব, ময়লা ফেলার স্থান না থাকা, বন্দি ওয়ার্ডে কাপড় রাখার জায়গা সংকটের মতো বেশ কিছু জটিলতা।
একজন কারাকর্মকর্তা জানিয়েছেন, রান্নাঘরের ধোঁয়া নির্গমণের জন্য জানালায় বড় আকারের শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত ফ্যান স্থাপনের জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে। গোসলের জন্য বন্দি ওয়ার্ডের পাশে অতিরিক্ত চৌবাচ্চা নির্মাণের কথা বলেছেন তারা।
কারাভ্যন্তরে প্রতিটি ভবনের সামনে ময়লা ফেলার স্থান নির্মাণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ভাগাড় নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
এছাড়া বন্দিদের গোসলের জন্য চৌবাচ্চা নির্মাণ, বন্দি ওয়ার্ডে কাপড় রাখার ব্যবস্থা নিতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কারা সীমানার প্রবেশ পথে প্রস্তাবিত প্রধান ফটকের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি; বাকি আছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও।
এখনো করা হয়নি কারাগারের ফটকের সামনে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড, নেই কারাভ্যন্তরে বড় গাড়ি প্রবেশের ব্যবস্থা। ক্যাফেটোরিয়াও এই বড় আয়তনের কারাগারের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
কোয়ার্টারে বসবাসকারী একাধিক কর্মকর্তা জানান, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। লোড ব্যবস্থাপনায় এখনো ট্রান্সফর্মার লাগানো হয়নি; রয়েছে পানি সংকট।
এসব বিষয়ে কথা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ছোট বড় প্রায় ৩৬টি সমস্যা চিহ্নিত করে নিজেরা যা যা সমাধান করতে পারি তা করছি, আর বাকি সমস্যাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
অগাস্ট মাসের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে বলে তার আশা।