আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

নেতারা ব্যস্ত আখের গোছাতে, অস্তিত্ব সঙ্কটে সংগঠন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,দেশের সংবাদ ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সাতটি সংগঠনকে। সবক’টি সংগঠনের কমিটিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে চারটি সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে ১২ থেকে ১৬ বছরের আগে। দীর্ঘদিনের পুরনো কমিটি অকার্যকর হয়ে পড়ায় সংগঠনগুলোর কার্যক্রম প্রায় স্থবির। যদিও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই এগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। মূলত দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা না আসার কারণেই এখনো কোনো সংগঠন সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাত সহযোগী সংগঠনের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং তাঁতী লীগের। ২০০০ সালের ২০ জুলাই আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, ২০০৩ সালের ১২ জুলাই মহিলা আওয়ামী লীগ, ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ যুব মহিলা লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে। ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট তাঁতি লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর একবারের জন্যও সম্মেলন করতে পারেনি তারা।

পরপর দুইবার ক্ষমতায় থাকলেও সরকারি কাজে নেতাদের ব্যস্ততার কারনে সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতি মূল দলের তেমন নজর নেই গত কয়েক বছর ধরে। দল ক্ষমতায় থাকায় এসব সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নেই কিন্তু পদধারীদের দাপট আছে। অনেকেই চাকরি, ব্যবসা, তদবির নিয়ে আখের গোছাতে ব্যস্ত। কর্মীদের খোঁজখবর রাখার সময় নেই তাদের। কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও এসব সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায় না। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও দেখা মেলে কদাচিৎ। এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল যোগ হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচে বেশিদিন ধরে সম্মেলন হচ্ছে না আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের। ১৬ বছর আগে সর্বশেষ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু সাধারণ সম্পাদক হোন। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী হলেও সংগঠনের দায়িত্ব ছাড়েননি। আর সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আবু রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) পদে নিয়োজিত হয়েছেন।

সংগঠনের এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু দেশের সংবাদকে বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত ব্যস্ততার পাশাপাশি রাজনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে এতোদিন ধরে সম্মেলন হচ্ছে না। তবে চিন্তা ভাবনা আছে সম্মেলন দেয়ার। এর মধ্যে আমরা বিভিন্ন জেলা ইউনিটের সম্মেলন দিচ্ছি । আশা করি নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আয়োজন করতে পারবো।

২০০৩ সালের ১২ জুলাই মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে আশরাফুন্নেসা মোশাররফকে সভাপতি ও ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০০৯ ও ২০১২ সালে ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হলে সংগঠনটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পিনু খান তার স্থলাভিষিক্ত হন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মূল দলের কর্মসূচিতে সংগঠনের শীর্ষ কয়েকজন নেত্রীকে দেখা গেলেও স্বতন্ত্র কর্মসূচির আয়োজনে ব্যর্থ।

সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি আশরাফুন্নেসা মোশাররফ দেশের সংবাদকে বলেন, বিভিন্ন কারণে সম্মেলন হচ্ছে না। সংগঠনের সম্মেলন দেয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। উনার সাথে আমার কথা হয়েছে। সম্মেলন দেয়ার ব্যাপারে তিনি আন্তরিক।

উল্লেখিত সংগঠনগুলোর মতই স্থবিরতা বিরাজ করছে যুব মহিলা লীগে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নবীন এ সংগঠনের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ। সে সময় নাজমা আক্তার ও অধ্যাপক অপু উকিলকে যথাক্রমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এরপর আর কোনো সম্মেলন হয়নি। হাইকমান্ড নির্দেশ দিলে সম্মেলন হবে বলে জানান নাজমা আক্তার।

এদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে তাঁতী লীগ। দলীয় কর্মসূচিতে যেমন তাদের দেখা যায় না, তেমনি নেই নিজস্ব কোনো কর্মসূচিও। ভবিষ্যতে এ সংগঠনটির কোনো কার্যকারিতা থাকবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জান যায়, মূল দলের ভাবনায় এখন ‘প্রান্তিক’ তাঁতী লীগ। এ সংগঠনটি নিয়ে দলে তেমন ভাবনা নেই কারোরই। ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট এনাজুর রহমান চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও খগেন্দ্র দেবনাথ, সাধনা দাসগুপ্তা, সোহরাব হোসেনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে তাঁতী লীগের সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু গত ১২ বছরে সংগঠনটির কোন্দল এতটাই তীব্র হয়েছে যে, বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।

সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির আহ্বায়ক এনাজুর রহমান চৌধুরী দেশের সংবাদকে বলেন, আমরা সম্মেলনের জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু দলের মধ্যেই কেউ কেউ চায় সম্মেলন না হোক, আরও কিছুদিন তারা পদে থাকতে চায়। তবে সংগঠনকে সুসংগঠিত করে নভেম্বর-ডিসেম্বরে জাঁকজমকভাবেই সম্মেলন দিয়ে দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.