আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

পদ্মা সেতু ইস্যু: সরকারের নৈতিক বিজয়

এসএনসি লাভালিন নামে একটি কোম্পানির তিনজন কর্মকর্তা ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আর তাতে বাংলাদেশের উচ্চপদস্থরাও জড়িত- এ অভিযোগে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের ১২০ কোটি ডলার ঋণ বন্ধ করে দেয়।
এমন নজিরবিহীন ঘটনায় সেসময় পদত্যাগ করেন মন্ত্রীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা।
সরকারের ভাবমূর্তির জন্যে এটি ছিল গুরুতর আঘাত।
তাই এ অভিযোগ যখন কানাডার আদালতে খারিজ হয়ে গেল- এটা একটা নৈতিক বিজয় হিসেবে বাংলাদেশের সরকারের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ মনে করেন “এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ”।
“বিশ্বব্যাংক তখন যে দাবিগুলো করেছিল তার মধ্যে একটি হলো – তারা বলেছিল পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে তার নির্ভরযোগ্য সাক্ষী তাদের কাছে আছে।
এরপর তারা বলেছিল যৌথ তদন্ত কমিটি করতে হবে এবং কমিটি শুধু বাংলাদেশ করলে হবে না তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বিশ্বব্যাংকের হাত দিতে হবে। সবশেষ তারা যে দাবি জানায় যে প্রকল্পে যারা সংশ্লিষ্টেআছেন, তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হবার আগেই তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
বাংলাদেশ তখন দুটো বিষয় মানেনি- আমাদের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হবে যদি বিশ্বব্যাংককে তদন্তের কর্তা বানানো হয়ম। আর সরকার বলেছিল যে আগেই কেন দোষী সাব্যস্ত করে তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করবো।
মি: আকাশ বলছিলেন, কানাডার আদালতের এ রায়ের ফলে প্রথম প্রমাণিত হলো- বিশ্বব্যাংক মিথ্যা অভিযোগ করেছিল।
“নির্ভরযোগ্য প্রমাণ তাদের হাতে থাকার কথা যটা বলেছিল, সেটা তাদের কাছে নেই এটা আরও বেশি করে প্রমাণ হয়েছে। কানাডিয়ান কোর্ট তাদের বলেছিল কাগজপত্র জমা দিতে, কিন্তু সেটা জমা দিতে অপারগতা জানায় বিশ্বব্যাংক”।
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে কানাডায় তদন্ত শুরু হয়েছিল। এখন মামলা খারিজ হয়ে যাবার পর বিশ্বব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতাও আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক এম এম আকাশ।
তাঁর মতে, “বিশ্বব্যাংক যথেষ্ট তথ্য ছাড়া অভিযোগ করে। এবং সন্দেহ হয় যে তাদের অপ্রিয় সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য এ অভিযোগটি করেছিল তারা”।

পদ্মা-সেতু-নির্মাণে-দুর্নীতির-অভিযোগ-নিয়ে-বিগত-বছরগুলোতে-অনেক-বিতর্ক-হয়েছে “পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিগত বছরগুলোতে অনেক বিতর্ক হয়েছে”কিন্তু এ মামলা খারিজ হয়ে যাবার অর্থতো এটা নয় যে বাংলাদেশে দুর্নীতি হয় না।
ভবিষ্যতে উচ্চ পর্যায়ে অন্য কোন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা রুদ্ধ করার জন্য সরকার এই নৈতিক বিজয়কে ব্যবহার করতে পারে – এমন সম্ভাবনা কি দেখা যায়?
মি: আকাশের মতে “এমন সম্ভাবনা দেখা যায় না”।
“সরকারতো সেটা তখন করতে রাজীও হয়নি। তখন যৌথ তদন্ত কমিটি করতে রাজীও হয়েছিল সরকার। কিন্তু বিশ্ব্যাংক বাড়তি চেয়েছিল পদত্যাগ এবং যে যৌথ তদন্ত কমিটি হবে সেটার মেরিট এসেস করার জন্য একটা সেপারেট প্যানেল বিশ্বব্যাংক করবে-সেটাতে সরকার রাজী হয়নি।
এখন যদি দুর্নীতির অভিযোগ উঠে , আবার তদন্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের যৌথ তদন্ত হবে। কিন্তু অন্য দেশ তাতে কর্তৃত্ব করতে পারবে না”।
এম এম আকাশ মনে করেন “বিশ্বব্যাংক তার ভুল বুঝতে পারবে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে”।
“তবে এ ঘটনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেক লাভবান হলো। তারা বুঝে গেল বিশ্বব্যাংক অনেক সময় অনেক রকম হস্তক্ষেপ করে যার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর সাহস পাবে তারা এই দৃষ্টান্ত থেকে”- বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.