আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

পাহাড়ে আরাকান আর্মির উৎপাত

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিহিংসা আর সংঘাতের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখা দিয়েছে। পাহাড়ে সক্রিয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী যার যার স্বার্থ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এখন মরিয়া। এর ফলে ছোট বড় অপরাধ বেড়েই চলেছে। খুন, অপহরণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি গত দেড় দশকের মধ্যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সশস্ত্র তৎপরতা। যা অশান্ত করে তুলেছে পাহাড়কে। পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির রাজনীতির এই সংকটের চিত্র নিয়ে চার পর্বের ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত হল :

বারবার ঝোপ বুঝে যেন বাংলাদেশের দুর্গম সীমান্তে কোপ বসাচ্ছে আরাকান আর্মি বা এএ। একের পর এক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানেও থামছে না পাশের দেশ মিয়ানমারের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির কার্যক্রম।

গত কয়েকদিন ধরে আকস্মিকভাবেই তিন পার্বত্য জেলার বিশেষ করে বান্দরবানের সীমান্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে এএ। সীমান্তের দুর্গম এবং অরক্ষিত এলাকা অনেকটাই এএ-এর নিয়ন্ত্রণে।

গত বছর থেকেই এদের তৎপরতা বাড়লেও এ বছর এসে কিছুটা কৌশল পাল্টেছে মিয়ানমারের বিছিন্নতাবাদী এই সংগঠনটি। গত বছর আগস্টে এএ-এর ৫০ থেকে ৬০ সশস্র সন্ত্রাসীর আক্রমণে বিজিবির এক সদস্য নিহতও হয়েছিলেন।

একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে ঢুকে এএ চেষ্টা চালাচ্ছে আদিবাসীদের মধ্যে আশ্রয় নিতে। আবার অন্যদিকে আদিবাসীরা সীমান্তের বৈরী পরিবেশে বাধ্য হচ্ছে এএ-এর সদস্যদের আশ্রয় দিতে।

সম্প্রতি এএ-এর সহযোগিতা করার জন্য দেশের ভেতরের বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের ধরতে জোর অভিযান চলছে। একই সঙ্গে সীমান্তের অরক্ষিত প্রায় সোয়াশ’ কিলোমিটার এলাকাকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তের অরক্ষিত অংশের সব কয়টি জায়গায় আগামী মার্চ মাসের মধ্যে আরো ২১টি ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন ক্যাম্প এবছরই প্রতিষ্ঠিত হবে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।

গত মাসের শেষ সপ্তাহেও বান্দরবানের থানচির দুর্গম পাহাড় থেকে নানান ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, জলপাই রংয়ের পোশাক, মোবাইল ফোন এবং বিপুল পরিমাণ টাকাসহ নয়জন এএ সদস্য এবং তাদের বাংলাদেশি সহযোগীকে আটক করেছিলো বিজিবি। বাড়ানো হয়েছিলো বিজিবি টহল।

এর মধ্যে এএ-এর সন্ত্রাসীদের আক্রমণ ও অপহরণ আতঙ্ককে থানচি এলাকায় পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে এক পর্যায়ে প্রশাসন বাধ্য হয়।

তারপরও থেমে নেই আরাকান আর্মির তৎপরতা। এখনও তাদের ভয়ে সীমান্তের একটি সুবিশাল এলাকায় পর্যটক প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত।

এছাড়াও এসব এলাকায় আদিবাসীদেরও চলতে হয় এএ-কে আশ্রয় ও সহায়তা দিয়ে। কখনও কখনও আদিবাসীরা ঐ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্টিকে দেশের ভেতর থেকে অর্থ ও খাবার সংগ্রহ করে দিতে বাধ্য হয়।

এএ খুব বড় সংগঠন না হলেও সীমান্তের দুই পাশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হুমকির মুখে রয়েছেন। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সূচি সরকারের সাথে সে দেশের ১৮টি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন শান্তি আলোচনায় বসলেও এএ ঐ আলোচনায় বসেনি। সংগঠনটি মনে করে মিয়ানমার সরকার আরাকান জনগোষ্টিকে তাদের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.