বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেশে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে তাদের ফাঁসি কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ।
রবিবার বেলা ১২টার দিকে ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে ওই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ঘণ্টা ধরে মানববন্ধন করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী, বিদেশে পালাতক আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে ফাঁসির রায় কার্য্কর করার পথ সুগম করার দাবিতে এদিন দেশের জেলা ও থানা পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচজন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে।
বাকি সাতজনের মধ্যে এম রাশেদ চৌধুরী, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেমউদ্দিন ও আব্দুল মাজেদ বিদেশে পালিয়ে আছেন। আব্দুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গিয়ে স্মারকলিপি দেয়।
প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী এনায়েত, আরিফুর রহমান লিমন, আমিনুল ইসলাম, সৈয়দ আশিক, তোফাজ্জেল হক চয়ন, আদিত্য নন্দী, চৈতী হলদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান রেজা, চন্দ্র শেখর মণ্ডল, ফয়সাল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জসিম উদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা এবং উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সাগর হোসেন সোহাগ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিদের বিচারে মৃত্যুদণ্ড হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের রায় কার্যকর হলেও এখন পর্যন্ত ছয়জন বিদেশে পলাতক রয়েছে।
“একই অপরাধে দণ্ডিত অপর আসামিদের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ছয় বছর পরও তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে না পারায় সমগ্র জাতির মতোই দেশের ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি ছাত্রলীগ ক্ষুদ্ধ ও দুঃখিত।
“শুধু জাতির পাপমোচন ও জাতির পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে নয়, সন্তানের দায়িত্ব হিসেবে পিতার পলাতক খুনিদের দেশের ফিরে এনে আপনার মন্ত্রণালয়ের জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা ও দক্ষতা প্রত্যাশা করি।”
এদিকে রোববারই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক শোক সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত যেসব আসামি বিদেশে পলাতক, তাদেরকে দেশে আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকরা কাজ করে যাচ্ছেন।
১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ওই সমাবেশে ‘খুব শিগগিরই’ তাদের দেশে এনে রায় কার্যকর করা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।