সংসদে উত্থাপিত বাল্যবিবাহ নিরোধ বিলের ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ বিয়ের বয়সের বিধান পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এতে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ বিয়ের বয়সে ছাড়ে নারীদের মতো পুরুষদেরও এ সুবিধার আওতায় আনার সুপারিশ করেছে।আজ বৃহস্পতিবার খসড়া আইনটি পরীক্ষা করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিন। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।
এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে তোলা হয়।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
সংসদীয় কমিটি এখানে ‘কোনো নারীর’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ এবং ‘মাতা-পিতা’র সঙ্গে ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের’ সম্মতির শব্দটি যোগ করেছে।
অর্থাৎ বিলটি পাসের সময় সংসদে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হলে, নারীর পাশাপাশি পুরুষের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রেক্ষাপটের বিধান প্রযোজ্য হবে। একইসঙ্গে ওই বিধানে বাবা-মা বা যেখানে প্রয়োজন সেখানে অভিভাবকের সম্মতির বিধান রাখা যুক্ত হবে।
এছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে, যা সংসদে উত্থাপিত খসড়া আইনে উল্লেখ ছিল না।
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়ে।প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এই বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ে উৎসাহিত হবে আশঙ্কা করে তা বাতিলের দাবি তুলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
এর জবাবে বিলটি সংসদে তোলার একদিন আগেই সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘অজ্ঞান’। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচেনায় রেখেই এই আইন করা হচ্ছে।
তবে ওই বিলের পক্ষে সরকারের যুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডব্লিউ বলেছে, “এ থেকে মনে হচ্ছে, ধর্ষণের কারণে কোনো মেয়ে গর্ভবতী হলে তাকেও ওই আইন দেখিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা হতে পারে।”
ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছিলেন, “বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি যুগোপযোগী আইন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশের মানুষ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানেন কিন্তু মানেন না। বাল্যবিবাহ বন্ধে সংসদে উত্থাপিত আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।”
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে। আগের আইনে এই অপরাধে নারীর কারাদণ্ডের বিধান মওকুফ থাকলেও এবার তা নেই। তবে সংসদীয় কমিটি ১৫ দিনের পরিবর্তে এক মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজারের বদলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখার সুপারিশ করেছে।