আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

বি. চৌধুরী:জঙ্গীবাদী উত্থান জাতীয় সংকট

বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশে জঙ্গীবাদী উত্থানকে জাতীয় সংকট হিসেবে উল্লেখ করে এ সংকট উত্তরণে জনসাধারণকে সাথে নিয়ে একটি কৌশল উদ্ভাবনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান। এ সময় দলের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রউফ মান্নান, মাহবুব আলী, সাহিদুর রহমান, বেগ মাহতাব, শাহ আহম্মেদ বাদল, বিএম নিজাম, রাবেয়া বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বি. চৌধুরী বলেন, দেশে এই জঙ্গীবাদী উত্থানকে সরকার ‘নব্য জেএমবি’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার ফলে দেশে অশান্তি ও উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মানুষের প্রাণ চলে গেছে।

তিনি বলেন, জঙ্গীদের মধ্যে দুটি শ্রেণীর একটি স্বদেশে অথবা বিদেশে প্রশিক্ষিত ও প্রণোদিত হয়েছে এবং দেশে একটি উগ্র নেতৃত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এরা সন্ত্রাস ও রক্তপাত করেছে। ভবিষ্যতে আরো রক্তপাত হওয়ার হুমকিও রয়েছে। দেশের মানুষ এবং আমাদের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক সহযোগীগণ ভীতি এবং শংকার মধ্যে দিন যাপন করছেন।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, জঙ্গীদের উগ্র নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে শিক্ষিত এবং সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত তরুণদের একটি অংশকে বিভ্রান্ত এবং ‘ব্রেইন ওয়াস’ করা হয়েছে। ফলে তরুণদের একটি অংশ মন্ত্রমুগ্ধের মতো উগ্রবাদী নেতৃত্বের আদেশ মেনে চলছে।
সমাজকে ভ্রষ্ট উল্লেখ করে বি. চৌধুরী বলেন, সামজিক অনাচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং ক্রমবর্ধমান মাদকে তরুণদের সংখ্যা বৃদ্ধি এটা একটি সামাজিক বাস্তবতা। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অনেকেই বিষন্নতা রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে বিষন্নতা থাকা রোগীদের একটি বড় অংশ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকে। ‘বিষন্ন’ তরুণরা অতি সহজেই ভয়ংকর কাজ করতে পারে, এটাও বৈজ্ঞানিক সত্য।

বি চৌধুরী বলেন, আজকের প্রেক্ষপটে সামগ্রিকভাবে সমস্যার সবদিক বিবেচনা করতে হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হচ্ছে দেশের সরকার। সরকার কয়েকটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন, তারা তার কৃতিত্বের দাবিদার। কিন্তু জঙ্গীদের বড় নেতাদের জীবন্ত না পাওয়া পর্যন্ত তাদের মূল পরিকল্পনা উদঘাটন করা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, হত্যা, গুম, রাহাজানি, যৌন হয়রানি এবং ছাত্রী ও মহিলা হত্যা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তার ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী। আলোচানার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর থেকে পরিত্রাণের রাস্তা বের করতে হবে। যেহেতু সরকারের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত সেইহেতু সরকারকেই প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে।

বি. চৌধুরী বলেন, জঙ্গী ইস্যুতে সরকার দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিরোধীদলকে ঐক্যপ্রক্রিয়ায় শরীক করতে রাজি হননি। সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে বাংলাদেশের মোট ভোটশক্তির একটি বড় অংশের মানুষ এখনও বিরোধীদলের পাশে রয়েছে। সরকার বিরোধীদলের কার্যকর শক্তিকে রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে এই সংকটের সময় অনেক কাজে লাগাতে পারতেন। সুতরাং বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে ঐক্যপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নয়, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।

বি. চৌধুরী এই সংকটের সময় বিরোধী দলের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, যদিও বিরোধী দলের দায়িত্ব সরকারের শক্তি-সামর্থ এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার তুলনায় সীমিত। কিন্তু তাদের পিছনে রয়েছে বড় একটি ভোটশক্তি। জনগণকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তোলা তাদের কর্তব্য। এই সংকটের সময় বিরোধীদলগুলোর জনগণের কাছে যেভাবে যাওয়ার কথা ছিল, যেভাবে কথা বলার কথা ছিল, তারা এখনও করতে পারেনি।

বি. চৌধুরী জঙ্গী ভাইরাসে আক্রান্ত দেশকে শংকামুক্ত করে একটি শান্তি-সুখের বাংলাদেশে পরিণত করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.