আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

ভাবিনি কখনও দুই বোন সব হারাবো

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর আরো সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, বাংলাদেশ প্রমাণ করে দিয়েছে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি দমনে অন্যদের চেয়েও বেশি সক্ষম। জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরোপ, ইংল্যান্ড, আমেরিকা-এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এমন ঘটনা না ঘটছে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা এটুকু বলতে পারি যে, ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন যেখানে যা ঘটছে তা আমরা মোকাবিলা করতে সক্ষম, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ আজকে ঐক্যবদ্ধ। অবৈধ ক্ষমতা দখলের, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে এ দেশের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকালে শোকের মাস আগস্টের শুরুতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পরবর্তী আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। দেশের মানুষের সেবাই তার ব্রত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কখনও ভাবিনি দুই বোন সব হারাবো। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এদেশের মানুষের দোয়াই আমাদের পথ চলার পাথেয়। কৃষক লীগের সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম, সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল আহসান খান, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন একটা উৎপাত শুরু হয়েছে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস। যখনই যে বা যারা এসব কাজে ধরা পড়ছে তাদের যদি গোড়ায় যাওয়া যায় তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যারা এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বা ঐ আলবদর-রাজাকার তাদেরই এরা সৃষ্ট বা দোসর। দেশবাসীর আরো সতর্কতা দরকার এবং আশেপাশে কোথায় কে আছে সকলের কাছে আমরা এর তথ্য চাই। বাংলার মাটিতে কোনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুনিদের স্থান হবে না। আর কোনো হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি যেন এই বাংলার মাটিতে না ঘটে। এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আমাদের পথ কণ্টকাকীর্ণ। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে পথ সবসময় কণ্টকাকীর্ণই হয়। সেই পথ অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা এগিয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাস শোকের, শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার প্রতিজ্ঞা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি, দেশের মানুষের দোয়া চাই। আমরা দুই বোন, বাংলার মানুষের দোয়াই আমাদের চলার পথের পাথেয়। প্রধানমন্ত্রী ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের কথা স্মরণ করে বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট আমার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, তারাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কখনও কল্পনাও করতে পারিনি আমরা দুই বোন সর্বহারা হয়ে যাবো।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছে। এভাবেই হত্যার ষড়যন্ত্র ও খুনিদের মদত দিয়েছে তারা। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো, তাদের নতুন করে দল গঠন করে রাজনীতির সুযোগ দিয়েছিলো। হাইকোর্টের রায়ে জিয়া, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। সেই সময় পরাজিত শ্রেণির দোসররা বারবার আঘাত হেনেছে। এখনও তাদের উত্তরাধিকারীরাই বারবার আঘাত করছে। আজ ১৫ই আগস্ট উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচি হচ্ছে। অতীতে যখন এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়েছি বার বার বাধার সম্মুখীন হয়েছি-এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করতে পেরেছি। ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও এগিয়ে চলেছে। এক একজনের দণ্ড কার্যকর হচ্ছে আর বাংলাদেশ একটু একটু করে পাপমুক্ত হচ্ছে। তারপরেও এদের প্রেতাত্মা, সন্তান-সন্তুতি অনেকেই রয়ে গেছে যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটি কথা আমি বলি, এই বাড়িটা (৩২ নম্বরের) বিএনপি’র আমলে তারা খুলে দেয়নি। কিন্তু, ১২ই জুন তড়িঘড়ি করে বাসাটা হস্তান্তরে তারা হঠাৎ অস্থির হয়ে পড়ে, এরআগে ৩রা মে জিয়াউর রহমান নিহত হয়। যে বাড়িতে এতদিন ঢুকতে দেয়নি হঠাৎ সেটা হস্তান্তরের পেছনে তাদের উদ্দেশ্য ছিল। চাপ ছিল এই বাড়ি নিতে হলে ৭২ পৃষ্ঠার একটি ইনভেনটরি লিস্ট আমাকে সই করতে হবে। আমার ছোট ফুপা তখন বারবার বলছিলেন, আইনজীবীর মাধ্যমেই বাড়িটা নেয়া হবে। কিন্তু, আইনজীবীর মাধ্যমে সে সময় কেন আমাকে দেয়া হয়নি তার কারণটা পড়ে বুঝতে পারি। তিনি বলেন, এই বাড়িতে সবাইকে হত্যার পর বাড়ি লুটপাট করে পরবর্তীতে সেখানে অবৈধ সম্পদ ঢুকিয়ে মৃত মানুষদের চরিত্র হননের চেষ্টা করে বিএনপি সরকার। ৪০ দিন পর্যন্ত বাড়িতে বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ রেখে টিভিতে দেখানো হয়। হীরা-জহরত, গয়নাগাটি অনেক কিছু এই বাড়িতে পাওয়া গেছে আর জিয়াউর রহমান ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গেছে (মারা যাবার সময়)। তার ছেলে-বউ তাদের জন্য কিচ্ছু রেখে যায় নাই। তারেক-কোকোকে ছেঁড়া প্যান্ট পরানো হতো, সেগুলো দেখানো হয়। অর্থাৎ ১৫ই আগস্ট তারা হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। পরবর্তীতে মৃত বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের চরিত্র হননের ঘৃণ্য কাজটাও বিএনপি সরকার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় আল্লাহর ওপরই ভরসা করেছিলাম। তাদের অপপ্রচার কখনও মানুষ গ্রহণ করেনি। বিএনপি সরকার বঙ্গবন্ধু যে একশ’ টাকার নোট বাজেয়াপ্ত করেছিলেন সেই নোটও ট্রাংক ভরে এনে এই বাড়িতে রেখে তা দেশবাসীকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, আজকে মানুষের কাছে স্পষ্ট কে কতটুকু বাংলার মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, কে কতটুকু মানুষের জন্য করতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু তার দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন। এই দেশের জন্যই তিনি জীবন দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, বাংলার গৌরবের ইতিহাস, রক্তস্নাত মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাস, বিজয়ের ইতিহাস-সব ইতিহাসকে মুছে ফেলে দিয়ে একটা মিথ্যা ইতিহাস দিয়ে এদেশের মানুষকে অন্ধ করে রাখার, বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাসকে কলুষিত করা হয়েছে। কয়েকটা প্রজন্মকে প্রকৃত সত্য, ইতিহাসকে জানতেই দেয়া হয়নি। অবশেষে ২১ বছর পর আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখনই এদেশের মানুষ সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আবার প্রচার হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই এদেশের মানুষের কল্যাণ করা, তাদের মুখে হাসি ফোটানো, তাদের উন্নত জীবন দেয়া। মানুষের সমর্থন নিয়েই জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি বলেই আজ তাদের কল্যাণে কাজ করতে পেরেছি। মানুষের জীবন মানের পরিবর্তন, কিছুটা হলেও তাদের জীবনে শান্তি ও স্বস্তি আনতে পেরেছি। এদেশের মানুষের ভাগ্য বদল করেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.