আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

ভারতীয় শিল্পীপ্রীতি ও আমাদের দৈন্য

সময় এখন মুক্তবাণিজ্যের। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের ব্যবসায়িক পণ্যের আদান-প্রদানের পাশাপাশি সংস্কৃতির আদান-প্রদানও সময়ের চাহিদা। বিষয়টি দোষের নয়। কিন্তু সংস্কৃতির আদান-প্রদানের নামে প্রতারণা কতটা সহনীয়? দেশীয় শিল্পীদের প্রাপ্ত মর্যাদা না দিয়ে বিদেশী তথা ভারতীয় শিল্পীদের প্রতি অতি প্রেম দেখানোটা শুধু অসহনীয়ই নয় দেশের সঙ্গে প্রতারণার শামিলও।

বিষয়টিকে হয়তো অনেকেই যুক্তিতর্কে খণ্ডানোর চেষ্টা করলেও বিবেকের কাছে তাদের মাথা নিচু করেই থাকতে হয়। আমাদের দেশে সিনেমা কিংবা গানের ক্ষেত্রে বিদেশী শিল্পীদের অংশগ্রহণ নতুন কিছু নয়। অনেক আগে থেকেই এমনটি হয়ে আসছে। যেটা আগে কম হলেও এখন হচ্ছে প্রকট আকারে।

আগে কিছুটা নিয়মনীতির অনুসরণ করেই বিদেশী শিল্পীদের দেশে কাজ করার সুযোগ দেয়া হতো। কিন্তু এখন আর সেটি নেই। সম্প্রতি যৌথ প্রযোজনার ছবি বানানোর হিড়িক পড়েছে দেশে। বিষয়টিকে অনেকে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য হুমকি হিসেবে দেখলেও এ বিষয়ে সোচ্চার হচ্ছেন না কেউ।

তবে সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে লেখালেখিতে থেমে নেই। ফলাফল শূন্য। আবার যে গণমাধ্যমকর্মীরা এর বিরুদ্ধে লিখছেন তাদেরও দেখা যাচ্ছে বিদেশী তৃতীয় গ্রেডের কোনো আর্টিস্ট এলেই তাকে বিশেষ কাভারেজ দেয়াসহ তার সঙ্গে সেলফি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।

বিষয়টি নিউজ কাভারেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা বললেও মনেপ্রাণে বিদেশী শিল্পীপ্রীতি তার মধ্যেও কাচ করেছে। এই তো সেদিনের কথা।

আমাদের প্রখ্যাত ব্যান্ডশিল্পী জেমস মাতিয়েছিলেন ভারতীয় দর্শকদের। তার গান শুনে অমিতাভ বচ্চন ব্যাপক প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘এ ধরনের কণ্ঠ স্রষ্টার বিশেষ দান।’

অমিতাভের মতো এত বড় শিল্পীর মন্তব্য সত্ত্বেও জেমস কিন্তু সে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে কাভারেজ পাননি বললেই চলে। এক ধরনের হীনমন্যতার করণে সে দেশের গণমাধ্যমগুলো চায়নি জেমস সেখানের আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছে যাক।

অন্যদিকে সেখানকার সঙ্গীতজ্ঞরাও জেমসকে নিয়ে কাজ করতে তেমন আগ্রহ দেখাননি। কারণ তারা জানতেন জেমস কী? বিগত ঈদুল ফিতরের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘শিকারি’র শুটিং ও প্রচারণার জন্য কলকাতায় অবস্থান করছিলেন ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান।

তাকে নিয়ে সেখানকার কোনো গণমাধ্যমই দু’কলম লেখেনি। অথচ জিৎ যখন ‘বাদশা’র জন্য ঢাকায় এলেন তাকে কী পরিমাণ কাভারেজ দিয়েছে আমাদের দেশের উদার গণমাধ্যম!

সে কী খাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে তার সবই উঠে এসেছে ছাপার অক্ষরে। সম্প্রতি ‘সত্ত্বা’ ছবির জন্য ঢাকায় এসেছেন কলকাতার ‘বি গ্রেডে’র নায়িকা পাওলি দাম। এবার তাকে নিয়েও দৃষ্টিকটু মাতামাতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে নায়করাজ রাজ্জাক আক্ষেপ করে বলেন, ‘সাংবাদিকরাই মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেমেয়েদের তারকা বানিয়ে দেন। বড় বড় ছবি আর ছাপার অক্ষরে যখন নিজেদের প্রশংসা দেখেন তখনই নিজেদের তারকা ভাবতে শুরু করেন। সুতরাং এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের একটু বেশিই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’

আপডেটের পেছনে ছুটে নিজেদের দীনতা প্রকাশ করাটা কখনোই বাঞ্ছনীয় নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.