আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

মানুষকে মাটির কাছে নিয়ে যায় বনসাই

ঢাকা : গাছ, নামটি শুনলে আমাদের মনের ক্যানভাসে উঁকি দেয় আকাশ মুখী বিশালার কোনো বৃক্ষের ছবি। উর্ধ্বমুখী এ বৃক্ষের জন্য দরকার হয় বিশাল-বিস্তীর্ণ স্থলভূমি। কিন্তু ব্যস্থতম রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে দালানকোঠার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে খোলা জায়গা ও গাছপালা। চাইলেই এখানে আমরা গাছ লাগাতে পারি না। তবে গাছের আরেক নান্দনিকরূপ বনসাই খুব অল্প জায়গায় এবং ছোট পটে তৈরি করা সম্ভব।

শক্ত কান্ড রয়েছে এমন গাছকে নান্দনিকভাবে ক্ষর্বাকৃতি করার যে শিল্প তা হচ্ছে বনসাই। আমরা বিভিন্ন রকমের বনসাই দিয়ে ঘরের জানালা, বারান্দা ও ছাদের বিভিন্ন স্থানে ছোট পরিসরে বাগান করতে পারি। এতে কিছুটা হলেও আমরা সবুজের ছোঁয়া পেতে পারি। গাছের গড়ন নির্ণয় থেকে শুরু করে তাতে পানি দেয়া এবং যে পাত্রে এটি চাষ করা হয় তা নির্ধারণ প্রতিস্থাপন সবই এ কাজের অন্তর্ভুক্ত।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় পাত্রে বা টবে গাছ বা বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা উৎপাদন করা হতো। প্রাচীন ভারতেও ঔষধ আর খাবারের জন্য টবে বা পাত্রে গাছ লাগানোর প্রচলন ছিল। বিভিন্ন সময়ে চীন দেশের নানা জায়গায়, জাপানে, কোরিয়াতে, ভিয়েতনামে এবং থাইল্যাণ্ডে ভিন্ন আকারে এর চর্চা বিস্তার লাভ করে। এই শিল্প এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নান্দনিক শিল্পকর্ম হিসেবে। বাংলাদেশেও এর কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সেদিন ছিল বুধবারের বিকেল। বর্ষার আকাশ জুড়ে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি। থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরছে তখনও। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে ঢুকতেই চোখের সামনে কেবল সবুজের ছড়াছড়ি। যেন পথ ভুলে কোন বনপথে এসে পড়েছি। ছোট- বড় মিলিয়ে এখানকার ৩০০টি গাছের এই সবুজ বনটি শুধু চোখ জুড়ানো নয়, মনও  ভুলিয়ে দেয়।

গাছগুলোর কোনোটার নাম কানাই ডিঙ্গা, কোনোটার নীলকণ্ঠ, জিলাপি। নজরকাড়া এসব গাছের মধ্যে আছে রাধাচূড়া, তেতুল, ডুমুর, নিশিন্দা, কৎ বেল, কেওড়া, অর্জুন, তমাল, ঘূর্ণি বিবি, বইচি, কাঁটা মেহেন্দি, বিলেতি মেহেন্দি, কেলি কদম, ফোটাকাপার্স, টগর, কাঁঠালিচাঁপা, বাগানবিলাস, শেওড়া, কামিনী, কৃষ্ণচূড়া, রঙ্গন, চেরি ইত্যাদি গাছের বনসাই। বিদেশি জাতের মধ্যে রয়েছে চাইনিজ বট, ল্যান্টিনা, ফোকেনট্রি, বাওবাব, ইপিল-ইপিল, জুপিটারসহ বিভিন্ন বামন আকৃতির বড় বড় বৃক্ষ।

এত দুলর্ভ বনসাই থাকার পরও প্রদর্শনীটিতে স্থান পেয়েছে বটগাছের সবধরনের প্রজাতি। এ গাছগুলোকে নানা আকার ও আকৃতি দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন যিনি তিনি বনসাই শিল্পী লায়লা আহমেদ। একটানা ১৬ বছর সন্তানের মতো নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করে চলেছেন তার আদরের গাছগুলো।

কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, তিনিও (লায়লা আহমেদ) কোনো একদিন শখের বসে ঢুকে পড়েছিলেন শিল্পী নাজমুল হকের বনসাই প্রদর্শনীতে। সেখান থেকে বনসাইয়ের প্রতি আগ্রহ হয় তার। প্রথমে একটি বনসাই, পরে আরও দুটি- এভাবে বাড়তে থাকে তার সংগ্রহশালা। আর এভাবেই শুরু করলেন বনসাই শিল্পের চর্চা। বর্তমানে লায়লা আহমেদের সংগ্রেহে রয়েছে ২০০ প্রজাতির ৪ শতাধিক নান্দনিক সব বনসাই। আর সেখান থেকে তিন শতাধিক বনসাই নিয়ে চারুকলার এই প্রদর্শনী। শিল্পী লায়লা আহমেদের মতে, ‘ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে এই শিল্পের তুলনা নেই।’

বনসাই প্রসঙ্গে নিসর্গী ও কথাশিল্পী বিপ্রদাশ বড়ুয়া বলেন, ‘বনসাই হচ্ছে বিন্দু থেকে সিন্ধুকে দেখা এক অনন্য শিল্প মাধ্যম। ঘরের সৌন্দর্য যেমন বাড়ায় তেমনি মানুষকে মাটির কাছে প্রাণের কাছে নিয়ে যায় এই শিল্প।’

শনিবার থেকে দুই শতাধিক বনসাইয়ের সমারোহে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী এ ‘মায়াবী বনসাই’ দেশে চলমান জঙ্গীবাদ অস্থিরতার মধ্যেও আয়োজন করছে রেডিয়েন্ট বনসাই সোসাইটি। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশবরেণ্য প্রকৃতিবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা।

এসময় তিনি বলেন, ‘কোনো হেলাফেলার শিল্প নয় বনসাই। এটা নান্দনিক শিল্প। দিন দিন এর কদর বাড়ছে।’

তিনি বলেন, প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা গাছটি বাইরের সৌন্দর্য বাড়ায়, ঘরের ভেতর নয়’।

প্রদর্শনী ঘুরে দেখার পাশাপাশি ইচ্ছে করলে কেনা যাবে বনসাই। দাম পড়বে ৫০০ থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রদর্শনীটি ২২ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা সকল শ্রেণির দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.