যাত্রাশিল্পীরা তিন বছরেও সাক্ষাত পাননি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের। বারবার চেষ্টা করেও যাত্রাশিল্পীরা তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা বলতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি প্রবীণ যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে।তিন বছরেও সংস্কৃতিমন্ত্রীর সাক্ষাত পাননি যাত্রাশিল্পীরা
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আজ সোমবার সকালে উন্নয়ন পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
মিলন কান্তি দে আরও বলেন, আমরা মুখেই বলি যাত্রা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য অধ্যায়। কিন্তু কার্যত এর কোন ফল আমরা দেখি না। সম্প্রতি সরকার ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ নামে যে কার্যক্রম সংস্কৃতিমন্ত্রণালয় হাতে নিয়েছে তাতেও যাত্রার কোনো স্থান নেই। এতেই প্রমাণ করে যাত্রাকে সরকার কীভাবে বিবেচনা করে।
সংস্কৃতিমন্ত্রণালয় যাত্রাশিল্পীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যাত্রাপালা স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলো, সাম্য ও মৈত্রী মানবতার বাণী দিয়ে গ্রাম বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করে রেখেছিলো, ভূমিকা রেখেছিলো দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে। অথচ আজ বিমাতাসুলতা আচরণ করছে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে যাত্রাশিল্পের অগ্রযাত্রা কিংবা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ব্যাহত করা হলে দেশজ সংস্কৃতির প্রতি সুবিচার করা হবে না। কারণ, অশ্লীলতার জন্য যাত্রাশিল্পীরা দায়ী নন। এদেশের চলচ্চিত্রেও তো অশ্লীলতা আছে। সে কারণে চলচ্চিত্র কী বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে?
যাত্রাপালায় বিন্দুমাত্র অশ্লীলতা হয় না বলেও দৃঢ়ভাবে বললেন মিলনকান্তি দে। ব্যাখ্য করে তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যাত্রাপালায় কোন প্রকার অশ্লীলতা হয় না। তবে যাত্রা শুরুর আগে কোনো কোনো এলাকার আয়োজক কমিটি যাত্রামঞ্চে অশালীন নৃত্যগীতের আয়োজন করে থাকেন। এই নৃত্যের জন্য বাধ্য করেন স্থানীয় রাজনীতিক গডফাদার ও প্রভাবশালীরা। কিন্তু এই অশ্লীলতা বন্ধের জন্য যাত্রা বন্ধ হয়ে যাবে? এ যেন মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলারই নামান্তর।
যাত্রার নীতিমালা প্রসঙ্গে প্রবীণ তিনি বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি যাত্রানীতি-মালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট তা গেজেটভুক্ত হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে সেই নীতিমালার প্রয়োগ যথাযথভাবে হচ্ছে না। কোনো কোনো জেলা প্রশাসক এটাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। এদিকে নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এ পর্যন্ত ৮৮টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন করেছে। কিন্তু নিবন্ধিত দলগুলো অনেক অনুমতি সমস্যার কারণে গত মৌসুমে যাত্রাপ্রদর্শনী করতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে দেশের রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও যাত্রাশিল্পীদের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় কনভেনশনের আয়োজন করবে বাংলাদেশ যাত্রা উন্নয়ন পরিষদ। সেখানে তাদের যে সুপারিশ থাকবে তা হলো-চলতি বছরের মধ্যে ঢাকায় একটি জাতীয় যাত্রামঞ্চ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির মতো জেলায় জেলায় সরকারি উদ্যোগে যাত্রামঞ্চ নির্মাণ, যাত্রাশিল্প একাডেমি করা। যাত্রায় অশ্লীলতা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা। দুস্থ যাত্রাশিল্পীদের ভাতা প্রদানেরপৃথক কোটা রাখা। মঞ্চ নাটকের মতো যাত্রার দলগুলোকে সরকারি অনুদান দেওয়া। প্রতি বছর শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে দেশিয় পালা নিয়ে যাত্রা উৎসবের আয়োজন করা ও যাত্রাশিল্পে প্রতিবছর একুশে পদক ও শিল্পকলা একাডেমি পদক প্রদান করা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন কবি ও যাত্রাপালাকার ড. আমিনুর রহমান সুলতান।
তিনি বলেন, শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যান্য বিষয়ের মতো যাত্রা নিয়ে তেমন লেখালেখি হয় না। হয় না গবেষণাও। যাত্রাশিল্প পিছিয়ে থাকার ক্ষেত্রে এটা একটা বড় প্রতিবন্ধকতা।