আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

রাষ্ট্রপতি ও ভিআইপিদের ছবি ব্যবহার করা বাকেরগঞ্জে সেই দুর্ধর্ষ প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা।

মোঃ বশির আহাম্মেদঃরাষ্ট্রপতি ও ভিআইপিদের ছবি ব্যবহার করা বাকেরগঞ্জে সেই দুর্ধর্ষ প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০ জুলাই সোমবার বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। উপজেলার পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের শ্রীকান্ত মন্ডল এর পুত্র তপন মন্ডল (৩৫) বাদী হয়ে পবিত্র চক্রবর্তী(৩৭) ও তার পিতা পরিমল চক্রবর্তীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং -সিআর -১৬৭/২০২০ (বাকেরগঞ্জ)।
সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আতিকুর রহমান জুয়েল জানান প্রতারক পবিত্র চক্রবর্তী অত্যান্ত দুর্দান্ত। শ্রীকান্ত মন্ডল এর পুত্র তপন মন্ডল এর নিকট থেকে ব্যবসার কথা বলে নগদ ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের চুক্তির মাধ্যমে এ টাকা নেয়া হয়। এছাড়া জনতা ব্যাংক লিমিটেডের একটি চেকের পাতা দিয়ে ভুক্তভোগীদের গোলকধাঁধায় ফেলা হয়। চেকের পাতার উল্টো পিঠে দুটি স্বাক্ষর রয়েছে ওই প্রতারকের।
বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদপত্রে ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ পড়ে বিষয়টি জানার পর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুনীল কুমার দাস বলেন, অপরাধী যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, অপরাধীরা শাস্তি না পেলে আইনের শাসন ব্যহত হয়। এরকম যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেগ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অমল চন্দ্র দাস শিবু জানান, ভুক্তভোগীরা তার কাছে গিয়েছিলেন। এরপর মীমাংসার জন্য পবিত্র চক্রবর্তীকে তিনি দুইবার খবর পাঠিয়েছেন। কিন্তু প্রতারক পবিত্র তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি। এতে সমস্যা সমাধানের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গত, বরিশালের বাকেরগঞ্জ একটি দুর্ধর্ষ প্রতারণা চক্রের সন্ধান মিলেছে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিশিষ্ট কবি শিল্পী সাহিত্যিক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ছবি ও নাম ব্যবহার করে ওই চক্রটি অভিনব কৌশলে প্রতারণা বানিজ্য করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। রাষ্ট্রপতিরসহ উল্লেখিত ব্যক্তিদের সাথে প্রতারণা চক্রের প্রধানে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট করে ধোঁকায় ফেলে মানুষকে প্রভাবিত করাই হচ্ছে ওই চক্রের প্রতারনার প্রধান কৌশল।
বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে এই অভিনব কৌশলের কারণে গোলকধাঁধায় পড়েছে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ বাহিনী,জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা পর্যন্ত! দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে শুরু করে ভিআইপিদের সাথে তোলা ছবি প্রচার করে বিভিন্ন দপ্তরে প্রশাসনিক এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে প্রতারণা বাণিজ্যও শক্তপোক্ত করেছে এই চক্রটি। এই কৌশলে পিলে চমকানো অপরাধ সংগঠিত করে ও ঝামেলাহীন ভাবে বহালতবিয়তে চলছে প্রতারণা। সংশ্লিষ্ট কিংবা বিশেষ কর্তৃপক্ষের পরিস্থিতিগত নীরবতার কারণে প্রতারণার কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে উল্টো বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতারণা চক্রের মামলা হামলার হুমকির কারণে মুখ খুলতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।
বাকেরগঞ্জের পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের পারশিবপুর গ্রামের শ্রীকান্তের পুত্র তপন মন্ডল ও তার হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এই দুর্ধর্ষ প্রতারক চক্রের পরিচয় এবং নজিরবিহীন অপকর্মের ফিরিস্তি। শিকার হয়ে সর্বস্ব হারানো তপন মন্ডল জানান ওই প্রতারক চক্রের প্রধান হচ্ছে পরিমল ঠাকুরের কুপুত্র পবিত্র চক্রবর্তী নামের এক যুবক তার বর্তমান ঠিকানা বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের বড়পুইয়াউটা গ্রামে। পিতা পরিমল ঠাকুর এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও এই প্রতারক চক্রের সদস্য। ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় লোকজন জানান প্রতারক চক্রের হোতা পবিত্র ঠাকুর নিজেকে জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীর পুরোহিত পরিচয় দেন এ কারণে তারা তাকে বিশ্বাস করেছিলেন এছাড়াও রাষ্ট্রপতি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে তোলা ছবি মোবাইলে দেখানোর পর পবিত্রকে আরো বেশি বিশ্বাস করছিলেন ভুক্তভোগীরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তপন মন্ডল এর শ্যালক সজল নামক এক যুবককে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক পবিত্র ঠাকুর। দাবি অনুযায়ী টাকা নেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিলে টাকা নিতে তপন মন্ডল এর বাড়ি যেতে পবিত্র ঠাকুর তার পর সমাজসেবা দপ্তরে চাকরি দেয়ার শর্তে তপন মন্ডল ও তার স্ত্রী প্রতারক পবিত্রের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার মা ও বাবা পরিমল ঠাকুরের সামনে পবিত্র ঠাকুর এর হাতে ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা ঐ দিনই নগদ দেন এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে আরো ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। সর্বস্ব হারানো ভুক্তভোগীরা জানান গোয়ালের সাতটি গরু বিক্রি করে এবং উত্তম মিস্ত্রি ও শ্রীকান্ত মন্ডল এর নিকট হতে ২ লাখ টাকা চরা সুধে নিয়ে ওই টাকা দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান টাকা নেওয়ার পর পবিত্র চক্রবর্তী এবং তার পিতা-মাতা নয় ছয় কথাবার্তা বলে তাদের সাথে অসদাচরণ করা শুরু করে। একপর্যায়ে নিজেকে রেহাই করতে ঘুষ দেয়া এবং নেয়া সমান অপরাধ উল্লেখ করে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালায় প্রতারক পবিত্র। ভুক্তভোগীরা পরে বিভিন্নভাবে অনুনয়-বিনয় করে টাকা ফেরত চাইলে পবিত্র জানায়, পুলিশ বিভাগে চাকরি দেওয়া হবে বলে তাদেরকে আশ্বাস দেন ও কাউকে জানালে চাকরি হবে না বলে ভয় দেখিয়ে পবিত্র তাদের বলেন ঝালকাঠি ও বরিশালের ডিআইজি’র সাথে কথা হয়েছে চাকরি অবশ্যই হবে।
তপন মন্ডল ও তার স্ত্রীকে প্রতারক পবিত্র আরো জানান, শুধু আপনাদের টাকায় নয় আরো ৫ জনের কাছ থেকে মোট ৪০ লাখ টাকা চাকুরী দেয়ার জন্য নিয়েছি। তাদের টাকা নেয়া হলেও তারা ভয়ে মুখ খুলছেন না ঘুষ দেয়া এবং নেয়া সমান অপরাধ এই ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের মুখ বন্ধ করে রাখেন এই প্রতারক চক্র ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.