আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

শাহদীন মালিক : তাৎক্ষণিক দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে শপথ ভঙ্গের বিষয়টি ওঠে আসায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।

তাৎক্ষণিক দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত : শাহদীন মালিক

আজ বৃহস্পতিবার দুই মন্ত্রীর আদালত অবমাননা সংক্রান্ত মামলার রায় প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে এমন অভিমত দেন তিনি।

শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য হলো যারা এসব (সাংবিধানিক) পদে থাকেন তারা আইনের তোয়াক্কা করেন না, সংবিধানের তোয়াক্কা করেন না। পদের মায়ায় পদে শেষ দিন পর্যন্ত বসে থাকেন। আমার মনে হয় অপচেষ্টার শেষ হওয়া দরকার। এবং যারা সাংবিধানিক পদে আছেন তারা সাংবিধানিক পদে থেকে যে ধরনের আচরণ আমরা আশা করি সে আচরণই করবেন।

অর্থ্যাৎ নৈতিকতা এবং আইনের ভার মাথায় নিয়ে আজকে থেকেই, আমি তো বলব, এই মুহূর্ত থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। আর পদত্যাগপত্র জমা দিলে সেটা সাথে সাথেই কার্যকর হয়।’

আইন অনুযায়ী আদালতের রায়ে জরিমানা হওয়ার পরই দুই মন্ত্রীর পদচ্যুত হওয়ার কথা বলে উল্লেখ করেছেন শাহদীন মালিক। সেক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত আইনের বিধান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতির একমত রায় হলো যে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

আমাদের একটা আইন আছে, যারা সরকারের কর্মে নিয়োজিত তাদের কোনো জরিমানা অথবা জেল হলে পদের থেকে সাথে সাথে বরখাস্ত হয়ে যান। মন্ত্রীদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হওয়ায় ওই আইন অনুযায়ী তাদের পদচ্যুত হওয়ার কথা, আইনগতভাবে। কিন্তু কেউ যদি আইনের তোয়াক্কা না করে সেটা তো ভিন্ন কথা।’

সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতে দুই মন্ত্রী শপথ ভঙ্গ করেছেন। আর এটাই আদালতের রায় এমনটা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যেটা বলা হয় সেটাই হলো রায়। এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বলা হয়েছে উনারা তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ করার পরে সাংবিধানিক কোনো পদে কোনো ব্যক্তির এক মুহূর্ত থাকার কোনো নৈতিক, সাংবিধানিক অধিকার নাই।’

ড. শাহদীন মালিক মনে করেন সংবিধান লংঘন করার কোনো সুনির্দিষ্ট শাস্তি লেখা নাই। তবে সাংবিধানিক পদে থেকে সংবিধান লংঘন করলে সরে যাওয়াটাই বিধান বলে উল্লেখ করেন এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, ‘এটা বুঝতে হবে সংবিধানের কোথাও সংবিধানের কোনো বিধান লংঘন হলে কি শাস্তি হবে সেটা বলে দেওয়া নাই। কারণ, সংবিধান তো অপরাধীদের একটা আইন না। সংবিধানের মূল ধারণাটা হলো-কেউ যদি কখনো দেখা যায় সাংবিধানিক পদে থেকে সংবিধানের কোনো বিধান লংঘন করেছেন তাহলে সাথে সাথে সরে যাবেন।’

প্রসঙ্গত, আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের মামলার ৫৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীর মামলার আপিলের রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগ সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছিলেন দুই মন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে চলতি বছর ২৭ মার্চ তাদের দোষী সাব্যস্ত করে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে সাত দিনের কারাদণ্ড দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় দিয়েছিলেন।

রায়ে মন্ত্রীদের দোষী সাব্যস্ত করা ও দণ্ড দেওয়ার ব্যাপারে সকল বিচারপতি একমত পোষণ করলেও তাদের শপথ ভঙ্গের বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। তাই পূর্ণাঙ্গ রায়টি ৫ জনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.