বাংলাদেশে গত এত দশকে বহু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারী অর্থায়নে বহু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এসব বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেনা।
পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তৈরি হয়েছে নানা সংকট। শিক্ষার্থী বাড়লেও বাড়েনি তাদের সুযোগ-সুবিধা।
সকাল সাড়ে সাতটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে দীর্ঘ লাইন। হঠাৎ দেখে মনে হয়, ঈদের সময় বাস বা ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে যে ধরনের দীর্ঘ লাইন হয়, অনেকটা সেরকম। কিন্তু লাইব্রেরীতে জায়গা পেতে সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই শিক্ষার্থীদের অনেকে এসে লাইনে দাঁড়ায়। দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ চিত্র মনে করিয়ে দেয়, বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়লেও পুরনো অবকাঠামো সেটি আর ধারণ করতে পারছেনা ।
মি: আহমেদ বলেন, ” ইউনিভার্সিটিতে ডিপার্টমেন্ট বেড়েছে , ছাত্র-ছাত্রীও বেড়েছে। কিন্তু ফ্যাসিলিটি বাড়ানো হয়নি। লাইব্রেরীর একটা ফ্লোর বাড়ানোর কোন চেষ্টা নেই।”
তিনি জানালেন, চাকরীর বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে এসে নিবিড়ভাবে পড়াশুনা করছে। সেজন্য লাইব্রেরিতে চাপ বেড়েছে।
চাকুরী প্রার্থী ছাত্রদের চাপের কারণে একাডেমিক পড়াশুনার জন্য যারা লাইব্রেরী ব্যবহার করতে চান, তারা সে সুযোগ পায় না। একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যে হারে বেড়েছে, লাইব্রেরিতে জায়গা সেভাবে বাড়েনি।
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৮টি। গত দশ বছরে অন্তত দশটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পুরনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ চিত্র দেখার পর আমি গিয়েছিলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৬ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ২০ কি:মি: দুরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। এখানে লাইব্রেরীর জন্য আলাদা কোন ভবন নেই। মূল প্রশাসনিক ভবনের পাঁচতলায় একটি কোনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লাইব্রেরী। এখানকার শিক্ষার্থীরা বলছেন , এ লাইব্রেরী তাদের জন্য তেমন কোন কাজে আসেনা। কারণ লাইব্রেরীতে প্রয়োজনীয় বই নেই এবং বসার তেমন একটা জায়গাও নেই।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রসায়ন বিভাগের একজন ছাত্রী আফরিনা হক জেসি জানালেন শিক্ষক সংকটও চরমে।
আফরিনা জেসির বর্ণনায় ” আমাদের বিভাগে ৪০০’র মতো স্টুডেন্ট। কিন্তু শিক্ষক নয়জন। এ মাসেই আরো তিনজন শিক্ষক বিদেশে চলে যাচ্ছেন পড়াশোনার জন্য। তাছাড়া ডিপার্টমেন্টের ল্যাব এবং লাইব্রেরীর পর্যাপ্ত সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। ”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ১৬০জনের মতো শিক্ষক আছেন। শুধু লাইব্রেরী বা গবেষণাগারের সংকট নয়। এমন কিছু বিভাগ আছে যেখানে শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই।
কোন কোন কক্ষে একসাথে চার-পাঁচজন শিক্ষককে বসতে হয়। শ্রেণী কক্ষের সংকট আরো চরমে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র শরীফ আহমেদ সে কথাই তুলে ধরলেন।
মি: আহমেদ বলেন, ” আমরা আসলে খুব সংকটের মধ্যে আছি। ক্লাসরুমের সংকট অনেক বেশি। আমাদের কোন একটা ব্যাচের যদি পরীক্ষা থাকে, তাহলে সে সময় ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেবার আলাদা কোন কেন্দ্র নাই।”
দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং তুলনামূলকভাবে নতুন – অর্থাৎ ঢাকা ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মোটামোটি একই ধরনের সমস্যায় ভুগছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। শিক্ষক আছে প্রায় ১২ হাজার। সে বিবেচনায় গড়ে প্রতি ২২জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। কিন্তু এটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমান নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪জন শিক্ষার্থীর জন্য যেখানে একজন শিক্ষক আছে সেখানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৫২জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক।
গত দশ বছরে সরকারীভাবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ,তেমনি পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন নতুন বিভাগ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে।