আজ : ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

ঔষধ রপ্তানি যেন বিলিয়ন ডলারের হাতছানি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম

আমাদের দেশের ঔষধ শিল্পের গল্প এক বিপ্লবের গল্প। পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও এ শিল্পের বিকাশ ঘটে আশির দশকে। স্বাধীনতার পর সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল প্রায় সম্পূর্নরূপে বিদেশি ঔষধের উপর নির্ভর। আজ মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে ১৬ কোটি মানুষের চাহিদার প্রায় ৯৮% এখন এদেশেই উৎপন্ন হয়। এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলে সমালোচিত বাংলদেশের এখন আছে গর্ভ করার মত বেশ কিছু শিল্প তার মধ্যে একটি হল এই ঔষধ শিল্প। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খাদ্যের সঙ্গে দেখা দেয় ঔষধের চরম সংকট। এই স্বাধীন দেশের ঔষধের প্রায় ৮০% করতে হয় আমদানি কিন্তু তখন ডলারের সংকট থাকার কারনে অনেক দেশেই আমাদের দেশে ঔষধ রপ্তানিতে আগ্রহ দেখাইনি। এমত অবস্থায় যতটুকু জানা যায় পন্যের বিনিময়ে সেই সময় প্রথম এগিয়ে আসে হাঙ্গেরি। এ ভূখন্ডে ঔষধ শিল্পের প্রথম যাত্রা শুরু হয় বাঘেরহাট থেকে ১৯২৭ সালে। অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী ও স্বদেশী পন্য ব্যবহারের আন্দোলন যখন গতি পাচ্ছে এমনি এক প্রেক্ষাপটে আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রথম সীমিত আকারে ঔষধ তৈরির কারখানা প্রস্তুত করেন। নাম দেন বেঙ্গল ক্যামিকেল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রথমে কিছু ক্রীম, সিরাপ, লোশন,এবং দু-একটি ক্যাপসুল দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সেটাই বাংলাদেশের প্রথম ঔষধ কারখানা। চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্য ঔষধ তৈরি এবং প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের অভাবে গুনগত মান কাঙ্খিত না হওয়ায় এই কারখানা খুব একটা গ্রহন যোগ্যতা পাইনি। তিনি তখনকার অনেক বিত্তবান লোকদের আহ্বান জানালেও পুঁজি নিয়ে তেমন একটা কেউ সাড়া দেইনি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সাল পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচটি কোম্পানি ঔষধ তৈরি শুরু করলেও সেগুলো কোনটাই আমাদের দেশীয় মালিকানায় ছিল না, ছিল বিদেশি ঔষধ তৈরির কারখানা। ১৯৬৩ সালে ঢাকার তেঁজগাও এ যাত্রা শুরু করে বিদেশি কোম্পানি অখইঊজঞ উঅঠওউ চঐঅজগঅঈঊটঞওঈঅখঝ এবং ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর ও এটাই ছিল এদেশের প্রথম ঔষধ কোম্পানি। পরবর্তিতে বিদেশি কোম্পানির সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, পাশাপাশি দেশি কোম্পানি তৈরি ও ঔষধ উৎপাদন অল্প অল্প করে যাত্রা শুরু করে এবং বর্তমানে প্রথম সারির সব ঔষধ কোম্পানিই কিন্তু এই খাতের অগ্রযাত্রার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত, তবে সেই সময় ঔষধের বাজার এর ৮০% বা তারও বেশি ছিল বিদেশি কোম্পানির দখলে অথবা আমদানিকৃত। এমনই এক প্রেক্ষাপটে দেশের ঔষধ শিল্পকে উদ্বুদ্ধ করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে তৈরি করেন আলাদা ঔষধ প্রশাসন। কিন্তু আমাদের এই শিল্পের অগ্রযাত্রার গতি বৃদ্ধি পায় ১৯৮২ সালে ঔষধ নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে, তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আজকে আমরা ঔষধ শিল্পে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী স্বয়ং সম্পূর্ন একটি দেশ, যা আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮% নিজেরাই উৎপাদন করি। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ তাদের চাহিদার এ পরিমান ঔষধ উৎপাদন করতে পারে না। আমাদের ঔষধের বাজার ২০১৮ সালে ছিল ২০১.৭ বিলিয়ন টাকা, যা টঝ ডলারের প্রায় ২.৫ বিলিয়ন, যেখানে বিশ্বে জেনেরিক ঔষধের বাজার ৫৩০ বিলিয়ন ডলার। সেই অর্থে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজার বৈশ্বিক বাজারের ০.৫%। কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্বে আমরা বিশ্বে ৮ম, যেখানে ১৬.৭৯ কোটি লোকের বসবাস যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার ২.১৮%। বসবাসকৃত জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের ঔষধের বাজার অনেক ছোট এর অন্যতম কারণ হল। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দূর্বলতা, অপ্রতুল সরকারি বাজেট ব্যবস্থাপনা এবং দারিদ্রতা। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বাজেটে মোট বরাদ্দের ৫.০৩ শতাংশ রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতের জন্য, যা ২৩ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে ছিল ২০ হাজার ২৪ কোটি টাকা বেড়েছে ১৭%। অন্যদিকে জাতীয় বাজেটের আকার ২৫ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী একটি দেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। স্বাস্থ্য খাতে মাথা পিছু বরাদ্দ বাংলাদেশে ৩২ ডলার,ভারতে ৬১,নেপালে ৩৯,ভিয়েতনাম ১১১,মালদ্বিপ ৭২০, শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১০০০। বাংলাদেশের সাধারন মানুষের পকেট থেকে চিকিৎসা খাতে খরচ হচ্ছে ৬৭ শতাংশ। ফলে প্রতি বছর প্রায় ৪০ লাখ লোক দারিদ্রসীমার নিচে চলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.