বরিশাল অফিস:সরকারী বিধি-বিধান না মেনে বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের ” ফুলতলা মোহাম্মাদিয়া আলিম মাদ্রাসার” প্রতিষ্ঠাতা বনে যাওয়া খলিল বিশ্বাস এর কল্পকাহিনী একদম ছিনেমার মতই। নেই কোন ব্যংক ডকুমেন্ট নেই কোন দলিল, নেই কোন রেজুলিউশন তবুও তিনি ফুলতলা মোহাম্মাদিয়া আলিম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা।কিভাবে তিনি প্রতিষ্ঠাতা হল ? একটাই প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসীর সুত্রে জানা যায়, একসময় সাস্থ্য কর্মী হিসেবে কাজ করা এই খলিল বিশ্বাস এর তিন ভাই আবুল কালাম আজাদ, রফিক বিশ্বাস, ও খলিল বিশ্বাস মিলে একই দলিল তিনবারে দিয়ে ৪৫ শতাংশ জমি দান করে ।অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯৮৪ সনে উক্ত জমির উপরে ফুলতলা মোহাম্মাদিয়া আলিম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক অধ্যাক্ষ মাওলানা একে এম আব্দুস সত্তার মিয়া।
মাদ্রাসা সুত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পদটি শুন্য ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে সিনেমার মত পাল্টে যায় প্রতিষ্ঠাতার পদটি।২০১৭ সালে নিজের হাতে করা এক ভুয়া রেজুলেশন এর মাধ্যমে বোর্ডের অনুমতি ছারা নিজের ক্ষমতা বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দাবি করেন।
বেসরকারী ম্যানেজিং কমিটি বিধিমালা-২০০৯ এর ২-এর ‘জ’ তে বলা হয়েছে “প্রতিষ্ঠাতা” অর্থ দাখিল বা আলিম স্তরের বেসরকারি মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকারী কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ, যিনি বা যাঁহারা সংশ্লিষ্ট মাদরাসা প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত উহার ব্যাংকের হিসাবে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা নগদে বা চেকের মাধ্যমে কিংবা রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে সমমূল্যের স্থাবর সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট মাদরাসার অনুকূলে দান করিয়াছেন, তবে এই বিধানমালা বলবৎ হইবার অব্যবহিত পূর্বে বিদ্যমান দাখিল বা আলিম স্তরের কোন বেসরকারি মাদরাসার গভার্ণিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত কোন প্রবিধানমালা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কোন বেসরকারি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা থাকিলে উক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ এই প্রবিধানমালার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, সংশ্লিষ্ট বেসরকারি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে গণ্য হইবেন।
সরকারি এই দুই বিধিমালার কোনটিই খলিলুর রহমান বিশ্বাস পূরণ করেন নি। সে কারণে তিনি ফুলতলা মোহাম্মাদিয়া আলিম মাদাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দাবি করার কোন এখতিয়ার রাখেন না।খলিলুর রহমান বিশ্বাস নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যে দাবি করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এছারাও সরকারী নির্দেশ আছে যে “প্রতিষ্ঠাতা” হওয়ার সকল শর্ত পূরন শাপেক্ষে সকল লেনদেন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে সম্পন্য করতে হবে,কিন্তু তার কাছে এ সকল ডকুমেন্ট চাওযার পরেও দেখাতে পারেন নাই. সে কারণে তিনি ফুলতলা মোহাম্মাদিয়া আলিম মাদাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দাবি করার কোন এখতিয়ার রাখেন না।
২০০৯” এর ৪১(২)(খ)৪ আদেশ এ আছে যে, কোন এ্যাডহক কমিটির সভাপতি কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনা। কিন্তু ২০১০ সালে ফুলতলা মোহাম্মাদিয়া আলিম মাদাসার এ্যাডহক কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান বিশ্বাস ৩ লাখ টাকা ঘুষ বিনিময়ের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ অধ্যাক্ষ মোস্তাফিজ মাওলানাকে নিয়োগ প্রধান করেন । যা সম্পুর্ন অবৈধ।সে সময় রেজুলিউশন বিধি না মেনে ৫ ঘন্টা এর ব্যাবধানে ২টি অবৈধ রেজুলিউশন করে দুর্নীতিবাজ অধ্যাক্ষকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
মোস্তাফিজ ২০১০ সালে মাদ্রাসার অধ্যাক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর অনৈতিক স্বার্থে পারস্পরিক যোগসাজসে খলিল বিশ্বাস কে পরিচালনা পর্ষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে বোর্ড থেকে পাশ করিয়ে এনেছিলেন। শুধু তাই নয়, মোস্তাফিজ এর দুর্নীতি ও অপকর্মকে আড়াল করার জন্য খলিল বিশ্বাস কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে দু’জনের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ঠ বিষয় জড়িত রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।