বরিশাল অফিস: অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকি মোকাবেলা, কার্বন শোষণ, নদী ভাঙন রোধ, পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন কারণে উপকূলীয় এলাকায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বাঁশের চাষ। তাও আবার আধুনিক কঞ্চিকলম পদ্ধতিতে। এ লক্ষ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকার বসতবাড়িতে বাঁশের বংশ বিস্তার ও চাষ পদ্ধতি শুরু করা হয়েছে কয়েক বছর আগে থেকেই। উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গায় লবণাক্ততার প্রভাব থাকায় এখন পর্যন্ত বাইজ্জা বাঁশ ও বরাক বাঁশের চাষ উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে সমগ্র উপকূলীয় এলাকার জন্য বাইজ্জা বাঁশ চাষ বেশি উপযুক্ত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট। সূত্র মতে, উপকূলীয় এলাকায় বৃহৎ আকারে বাঁশের চাষ পরিকল্পনার আগে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে প্লান্টেশন ট্রায়েল ইউনিট (পিটিইউ) একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ওই গবেষণায় উপকূলীয় বসতভিটায় কঞ্চিকলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষে আশাব্যঞ্জক সফলতা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই দু’টি বাঁশের গবেষণার মধ্য দিয়ে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন বসতবাড়ীতে এ বাঁশ লাগানোর জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। দেওয়া হয় কঞ্চিকলম পদ্ধতিতে প্রায় ১৫ হাজার বাঁশের চারা। ২০১০ সালে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সার্ভে অনুযায়ী ভোলার চর কুকরি-মুকরিতে ২০৫টি বাড়িতে সার্ভে করে ৫টি বাঁশঝাড় পাওয়া যায়। সেখানে এই গবেষণার ফলে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৬৭৮ বসতবাড়িতে চারা বিতরণ করা হয়। আবার পটুয়াখালীর রাঙাবালীতে ২০১০ সালে ১৯৮ বাড়িতে সার্ভে করে ২৯টি বাঁশঝাড় পাওয়া যায়। সেখানে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রাঙাবালীতে ৬৩৯ বসতবাড়িতে চারা বিতরণ করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে এখন ভোলায় ৯৫ ভাগ এবং পটুয়াখালীতে ৯৩ ভাগ চারা সফল ভাবে বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। আবার অনেক স্থানে বাঁশ সংগ্রহ করাও শুরু হয়েছে। একই অবস্থা সীতাকুন্ড ও নোয়াখালীতেও। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক মোহা. আব্দুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, বাঁশ খুবই দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ। বাড়িঘর নির্মাণ, কৃষি, যোগাযোগ, বাণিজ্যিক সেক্টরসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের বিভিন্ন আসবাবপত্র এবং সৌখিন দ্রবাদি তৈরির কাজে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক কথায় জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে বাঁশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বাঁশের কচি কাণ্ড সুস্বাদু সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে এবং দিন দিন উন্নত বিশ্বের হোটেলে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আধুনিক পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ কারণে উপকূলীয় এলাকায় দিন দিন বাড়ছে বাঁশের চাষ।এছাড়া বাঁশ অন্যান্য উদ্ভিদের চেয়ে বেশি কার্বন শোষণ করতে পারে, মাটি আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে, পশু-পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবেও পরিচিত এই বাঁশঝাড়। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর কঞ্চি কলমের মাধ্যমে চাষ করলে অল্প সময়ের মধ্যেই একটি পূর্ণাঙ্গ ঝাড় পাওয়া যায়। পাশাপাশি কঞ্চি কলমের চাষ পদ্ধতিতে খরচও কম। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তা শেখ এহিউল ইসলাম বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকায় গ্লোবাল ওয়ার্মিয়ের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিধ্বংসী প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য বাঁশ খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে ব্যাপক বাঁশ রোপণের মধ্য দিয়ে এসব বিধ্বংসী প্রভাব বহুলাংশে কমানো যেতে পারে। পাশাপাশি বাঁশ চাষে সাধারণ মানুষের আগ্রহও রয়েছে। এ বিষয়ে বন বিভাগের বা এনজিও সেক্টরের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে উপকূল সংলগ্ন ৪৮টি উপজেলায়ই বাঁশঝাড়ের অভাব হবে না। যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।