আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

খুঁজছে ন্যায়বিচার শিশুর কোলে সন্তান

মাত্র তিন মাস হয়েছে পৃথিবীর আলো দেখেছে শিশু মো. ওমর ফারুক। এখন পর্যন্ত কেবল মায়ের পরিচয়েই পরিচিত হতে হচ্ছে তাকে। আর সেই মায়ের বয়স কত জানেন? মাত্র ১১ বছর।
হ্যাঁ ১১ বছরের একটি শিশুই ওমর ফারুকের মা। নির্যাতনের শিকার হয়ে মা হওয়া এই শিশু কোলে আরেক শিশু নিয়ে ন্যায় বিচারের আশায় ঘুরছে আদালতপাড়ায়।

নিরাপত্তা আর আইনি জটিলতার কারণে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলো না ওই শিশু মায়ের নাম। বরগুনার বামনা থানা এলাকার আর ১০টা সাধারণ শিশুর মতোই নিষ্পাপ চেহারা মেয়েটির। শিশুসুলভ আচরণ এখনো তার ভেতরে। শিশুটির দুর্ভাগ্য শুরু হয় মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকে। সে সময়ই বাবা মারা যায় তার। মানুষের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে ভাইবোনদের নিয়ে সংসার চালান শিশুটির মা।

পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশু ও মামলার বাদী আজ সোমবার এনটিভি অনলাইনকে জানায়, ভয় দেখিয়ে মান্নান নামের এক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে। পরে এ কথা কাউকে জানাতে নিষেধও করে সে। এ কথা কাউকে জানালে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় মান্নান। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের প্রাণ রক্ষায় ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি সে। পরে গর্ভবর্তী হওয়ার পর কথাটি মান্নানকে জানালে সে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেয়।

নির্যাতিত শিশুটির ভাই জানান, বিষয়টি জানার পর তারা মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর ১১ বছরের শিশু বোনটিকে আসামি মান্নান ধর্ষণ করেছে। অথচ ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি তাঁর বোন। এ বছরের ৩০ এপ্রিল তাঁর বোনের গর্ভ থেকে জন্ম নেয় ওমর ফারুক।

ওই ভাই বলেন, ‘আমরা খুব গরিব ও অসহায়। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে আমাদের জন্য ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করেন। এখন এ শিশুটিকে রোজ দুধ খাওয়ানো বা লালন-পালন করার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই।’
তিনি আরো জানান, আদালতে মামলা করার পর আইনজীবীর খরচসহ সব খরচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। আসামি খুব প্রভাবশালী হওয়ায় এখনো তাদের অনবরত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

শিশুটির আইনজীবী সামিউল কবির আলমগীর বলেন, ভিকটিম শিশুটি বাদী হয়ে গত ২৩ মার্চ ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৪-এ ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা করে। আদালতে বিচারক শিশুটির জবানবন্দি শুনে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পাঠান। পরে শিশুটি ঢাকার মহানগর হাকিম আমিরুল হায়দার চৌধুরীর আদালতে সাক্ষী দিলে বিচারক নারী ও শিশু আদালতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান। তদন্তে প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।

আইনজীবী আরো জানান, আজ সোমবার এ মামলা আমলে নেওয়ার দিন ধার্য ছিল। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল -৪ এর বিচারক রেজানুল হক তদন্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি আমলে নেন এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বাদী বামনার জাফ্রাখালী সরকারি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা অবস্থায় বাসায় যাওয়ার পথে আসামি আ. মান্নান তাঁকে প্রায়ই কু-প্রস্তাব দিত। বাদীর মা ওই স্কুলের বাচ্চাদের খিচুড়ি রান্নার কাজ করতেন। সে সুবাদে তার মাকে সারাদিন ওই স্কুলে থাকতে হতো। ফলে বাদী বাসায় একা একা থাকত।

আসামির কৃষি জমি বাদির বাড়ির পাশে থাকায় আসামি জমিতে কাজ করার সময় পানি খাওয়ার অজুহাতে বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার সাথে অনৈতিক আচরণ করেন।
২০১৪ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাদী উত্তীর্ণ হলে ছোট ছোনবুনিয়া দোয়াতলা আল রহমান আলিম মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শেণিতে ভর্তি হয়। মাদ্রাসাটি দূরে হওয়ার আসামি বাদিকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে মানসিক ও যৌন নির্যাতন করত।

বিষয়ে কাউকে জানালে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত। বাদী আসামির এসব অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢাকার বাড্ডায় তার ফুফুর বাসায় চলে এসে বসবাস শুরু করে। ফুফু খাদিজা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। আসামি বাদীর ঠিকানা জানতে পেরে বাড্ডার ফুফুর বাসা খুঁজে সেখানেও এসে উপস্থিত হয়। একইভাবে ফুফুর অনুপস্থিতিতে অনৈতিক কাজ করতে শুরু করে।

গত বছরের ২৮ জুন বাদী ফুফুর বাসায় একা থাকা-কালীন আসামি ঘরে ঢুকে বাদীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন এবং যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যান। পরে আসামি একই কায়দায় বাদীকে গত বছরের ৮ জুলাই, ১৮ জুলাই ও ২৮ জুলাই ধর্ষণ করেন। এ বিষয়ে বাদী প্রাণ ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি। বাদী কিছুদিন পর ধর্ষণের ফলে গর্ভবর্তী হয়ে পড়লে মেডিকেল পরীক্ষা করায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.