আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

টেনশনে ট্যানারি মালিকরা

ঢাকা : রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্প সাভারে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে মালিকদের। আবার সামনে কোরবানির ঈদ। ট্যানারি স্থানান্তরের বিষয়ে সরকার হার্ডলাইনে থাকলেও মালিকদের ধারনণা ছিল কোরবানির পর পর্যন্ত সময় পাবে। কিন্তু  হাইকোর্টের নির্দেশনা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রাখায় ১৫৪টি ট্যানারির প্রত্যেক মালিকই রয়েছেন দুচিন্তায়।

হাজারীবাগে মাত্র ৫০-৬০ ট্যানারিতে সারাবছর উৎপাদনকাজ চলে। অন্যগুলোতে শুধু কোরবানির সময় কাজ চলে। তাই সব মালিকের পক্ষে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেয়া অসম্ভব। আবার এ মুহূর্তে স্থানান্তর করাও সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা।

আপিলের রায়ে জরিমানা কবে থেকে কার্যকর হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই ট্যানারি মালিকদের। রায়ের কপি হাতে এলে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ ও মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি দেশে ফিরলে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। শুক্রবার তার দেশে আসার কথা।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশমতো দৈনিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা না দিলে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এর আগে ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য সরকার ২৮ বার নোটিশ ও কয়েকবার আল্টিমেটাম দেয়ায়।

ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে দৈনিক ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করতে শিল্পসচিবের তত্ত্বাবধানে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। প্রতি পাঁচ দিন পর পর কোন কোন ট্যানারি মালিক আদালতের নির্দেশমতো অর্থ জমা দিচ্ছেন আর কারা নির্দেশ অমান্য করে জমা দিচ্ছেন না, তার তালিকা করে বিসিক থেকে শিল্পসচিবের কাছে পাঠানো হবে।

ওই তালিকা এবং ট্যানারি স্থানান্তরের অগ্রগতি সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে পাঠানো হবে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত উল্লাহ বাংলামেইলকে বলেন, ‘হাজারীবাগে অনেক ট্যানারিতে সারা বছর উৎপাদন থাকে না। শুধু কোরবানির সময় উৎপাদনে যায় তারা। যাদের কোনো উৎপাদন নেই, তারা কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে। এ ধরনের চাপে চামড়াশিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে।’

কোরবানির ঈদের আগে সর্বোচ্চ ৭০টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরিত হতে পারে বলে জানান তিনি।

এ খাতের রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিএফএলএলএফইর সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের বলেন, ‘চামড়াশিল্প স্থানান্তর নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার কারণেই চামড়া রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সরকার প্রকল্পটি প্রস্তুত করতে বেশি সময় নিয়েছে। তাই উদ্যোক্তারাও দেরি করছে। আদালতের ওপর আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’

সাভারের হেমায়েতপুরে ২০০ একর জমিতে ‘চামড়া শিল্পনগরী’ নামের এই বহুল আলোচিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) ও বিদ্যুৎ লাইনসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিক চেয়ারম্যান মো. হজরত আলী।

তিনি বলেন, ‘সিইটিপির ৪টি মডিউলের মধ্যে ২টি মডিউল চালুর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ২টি মডিউল চালু করতে কমপক্ষে ৪৮টি ট্যানারির বর্জ্য প্রয়োজন।’ বর্জ্যের অভাবে সেগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন ট্যানারি মালিকরা সেখানে গেলেই হয়। এ প্রকল্পের পাশেই ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য আবাসন, মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল ও বিনোদনের ব্যবস্থা করার জন্য আমরা কাজ করছি।’

গত ১৬ জুন ১৫৪টি ট্যানারির মালিককে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে স্থানান্তর হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন আদালত। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন ট্যানারি মালিকরা। গত সোমবার আপিলের রায়ে জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.