আজ : ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News

বরিশালে খালের ওপর আ’লীগ অফিস!

বরিশাল অফিস : বরিশাল জেলা প্রশাসনের খাল উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা করে স্বেচ্ছায় দোকান ভেঙে নেয়ার একদিনের মাথায় সেই জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এমনকি জমিটি দখলে রাখতে সেখানে ওয়ার্ড আ’লীগের প্রধান কার্যালয় নামক একটি সাইনবোর্ডও সাটিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই কার্যালয়ের ভিতরে এখন ঝুলিয়ে রাখতে দেখা গেছে খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ছবি। একই সাথে সেখানে শোভা পাচ্ছে দখিনা আ’লীগের কর্ণধর সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও তার ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবিও। স্থানীয় আ’লীগে নেতা আবু মোল্লার এমন কর্মকান্ড দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন বলে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস দেখায়নি। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে- এই আবু মোল্লা এরআগে বেশ কয়েকবার মাদকসহ র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছেন। এমতাবস্থায় স্থানীয়রা এখন বরিশাল জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। সূত্রমতে, সম্প্রতি বরিশাল জেলখাল উদ্ধার অভিযানে নেমে এক ধরণের অসাধারণ বিপ্লব সৃষ্টি করেন জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা। তার ঘোষণার প্রেক্ষিতে নগরীর জেলখাল দখল করে রাখা অনেক ভবন স্বেচ্ছায় মালিকরা ভেঙে নেয়। আবার কেউ ভাঙতে নারাজ থাকায় জেলা প্রশাসক নিজে ভুমিকা রেখে জেলখাল উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যান। যে কারণে খাল দখলে লাভ নেই এমন ধারণা অনুমানে এনে অনেকেই ইজ্জত রক্ষায় নিজ ভবন বা দোকান সরিয়ে নেন। সর্বশেষ জিয়া সড়ক এলাকায় জেলা প্রশাসন একটি বড় ধরণের অভিযান চালিয়ে থাকার ওপর থাকা শতাধিক দোকানঘর ভেঙে দেয়। ফলে সেই স্থান থেকে কিছুটা দূর ২৭ নং ওয়াডের রুইয়ার পোল এলাকায় খাল দখলে রাখা দোকান মালিকরাও তাদের দোকন সরিয়ে নেয়। অথচ দোকান সরিয়ে নেয়ার পর একদিনের মাথায় সেই খালের ওপরেই নির্মাণ হলো আ’লীগের কার্যালয়। অভিযোগ উঠেছে ২৭ নং ওয়ার্ড আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আবু মোল্লা সুযোগ পেয়ে জায়গাটি দখল করার একটি নয়া কৌশল নিয়েছেন। যদিও তিনি বলছেন, কার্যালয়টি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে সেই জায়গার মালিক আবুল চৌকিদার। জমির মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে গত রোববার তারা কার্যালয় করেছেন। অথচ স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসনের ক্রমশই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রুইয়ার পুলের দিকে আসছেন এমন সংবাদে খাল দখল করে রাখা অনেকেই স্থাপনা সরিয়ে নেয়। এমতাবস্থায় খালের তীরবর্তী জমিটি দখলে নিতে রাতের আঁধারে একটি দোকানের ওপরে আ’লীগের কার্যালয় নামক সাইনবোর্ড সাটানো হয়। এই রাতের আধারে ক্ষমতাসীনদের খাল দখলের বিষয়টি ভালোভাবে দেখছে না এলাকার মানুষ। তাদের মতে জমিটি দখল নিতেই আ’লীগের কার্যালয় নাম করা হয়েছে। তাই তারা খালকে নিরাপদ রাখতে দখলমুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। কারণ অনেকটা স্বচ্ছ মনের মানুষ বরিশাল জেলা প্রশাসক এই খাল উদ্ধার অভিযানে নেমে সাহসী ভূমিকা রেখে বেশ আলোচিত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে ২৭ নং ওয়ার্ড আ’লীগের নেতাকর্মীদের এই জমি দখলের অপকৌশলও ধোপে টিকবে না। তবে কার্যালয় নির্মাণকারী জিয়া উদ্দিন আবু মোল্লার দাবি খাল তীরবর্তী জমিটি সরকারি হলেও স্থানীয় আবু চৌকিদারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। পরবর্তীতে গত রোববার সভাপতি সম্পাদক ভুমিকা রেখে সেখানে কার্যালয় করেছেন। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা একেবারে অনার্থক। খাল দখলে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে ওয়ার্ড আ’লীগে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম বাবুল জানালেন, খালের পাড়ের জমিটি ভাড়া নিয়ে কার্যলয় করা হয়েছে। এতে খালের ওপর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলে দাবি তার। কিন্তু সাবেক দোকান মালিকরা স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার পর রাতের আঁধারে সেখানে কার্যালয় নির্মাণ কেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি এই নেতা। এমতাবস্থায় বরিশাল জেলা প্রশাসক ড. মো. গাজী সাইফুজ্জামানের অভিব্যক্তি হচ্ছে, অভিযান চলছে। দখলকারী যে দলীয়ই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে দখলকারী সকলকেই উচ্ছেদ করা হবে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, অব্যাহত উচ্ছেদ অভিযানই আ’লীগে নেতাদের দখলের অপকৌশলের অবসান ঘটবে। অবশ্য এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment moderation is enabled. Your comment may take some time to appear.