মো ঃ জসীম উদ্দিন : স্কুল ছাত্রীকে ধর্ণষের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়েরের পরেও স্থানীয় ইউপি সদস্যর চাঁপের মুখে প্রহসনের সালিশ বৈঠকের বিষয়টি মঙ্গলবার ( ১৯ জুলাই ) সকালে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই বৈঠকে ধর্ষিতার কাছ থেকে জোড়পূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় করে তার (ধর্ষিতা) ইজ্জতের মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার নাঘিরপাড় গ্রামের। পুরো টাকা আগামী শুক্রবারের মধ্যে ধর্ষিতার পরিবারকে পরিশোধ করার জন্য সময় নির্ধারন করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাক্তিরা জানান, নাঘিরপাড় স্কুলের দশম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অতিসম্প্রতি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এরপরেও বাগধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি ধর্ষকের পক্ষালম্বন করে শনিবার স্থানীয় কালী মন্দিরে কৌশলে ধর্ষিতার পরিবারকে সালিশ বৈঠকে হাজির করেন। ওই বৈঠকে চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টির সভাপতিত্বে ধর্ষণের সালিশ বৈঠকে সাত সদস্যর সালিশ বোর্ড গঠণ করা হয়। সালিশ বোর্ডের অপর সদস্যরা হলেন, বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এআর ফারুক বক্তিয়ার, ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি কাসেম বক্তিয়ার, নাঘিরপাড় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আবুল বাশার, স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম, দিলীপ বাড়ৈ ও ধর্ষক পরিবারের একজন সদস্য। এসময় বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলো ছাত্রী ধর্ষনকারী ওই গ্রামের দুলাল মন্ডল, তার বাবা আমরী মন্ডল, ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী ও তার বাবা, ইউপি সদস্য কালাম হাওলাদার, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রেনুকা অধিকারী ওরফে কালা বউ, সাবেক ইউপি সদস্য কুমোদ রায় প্রমুখ। সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বল্প সময়ের স্থায়ী সালিশ বৈঠকের শুরুতেই চেয়ারম্যান হতদরিদ্র ধর্ষিতার বাবা ও ধর্ষিতাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের মঙ্গলের জন্য এ সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে ৩’শ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে ধর্ষিতা, তার বাবা, ধর্ষক দুলাল মন্ডল, তার বাবা আমরী মন্ডল ও স্থানীয় নিত্যানন্দ হালদারের স্বাক্ষর আদায় করেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানসহ সালিশ বোর্ডের ওই সাত সদস্য আলাদাভাবে আলোচনা করে ধর্ষকের দেড় লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। পরবর্তীতে সালিশবৃন্দরা ২০ হাজার টাকা কমিয়ে ধর্ষিতার ইজ্জতের মূল্য নির্ধারন করেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তাৎক্ষনিক জরিমানার ৩০ হাজার টাকা ধর্ষক পরিবার পরিশোধ করলেও ওই টাকা ধর্ষিতার পরিবারের হাতে না দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এআর ফারুক বক্তিয়ারের কাছে জমা রাখা হয়। বাকি ১ লাখ টাকা আগামী শুক্রবারের মধ্যে দেয়ার কথা রয়েছে। এ টাকার মধ্যে থানা পুলিশ ম্যানেজের কথাও জানানো হয় বৈঠকে। ধর্ষিতার স্বজনরা অভিযোগ করেন, অর্থের অভাবে মামলা চালানো তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। এ সুযোগে প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক প্রহসনের সালিশ বৈঠক করে উল্লেখিত রায় ঘোষণা করেছেন। ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী ধর্ষকের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনসহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উল্লেখ্য, উপজেলার নাঘিরপাড় গ্রামের হতদরিদ্র এক দিনমজুর বাবার দশম শ্রেনীতে পড়–য়া কন্যাকে গত ৫ জুলাই জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে একই গ্রামের আমরী মন্ডলের পুত্র দুলাল মন্ডল। এ সময় ধর্ষিতার ডাকচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ধর্ষককে হাতেনাতে আটক করে। পরে ধর্ষক পরিবারের লোকজনে তাদের বিয়ের প্রতিশ্র“তি দিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে দুলাল মন্ডলকে ছাড়িয়ে নেয়। প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী গত রবিবার তাদের বিয়ের কথা ছিল। কিন্ত ধর্ষক ও তার পরিবার বিয়েতে তালবাহানা শুরু করলে ধর্ষিতা বিয়ের দাবিতে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ধর্ষিতার বাবা তার কন্যাকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও থানা পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার চাঁপের মুখে অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করেননি। উপায়অন্থর না পেয়ে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত বুধবার মামলা দায়ের করা হয়। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশকে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ প্রদান করেন। সোমবার আদালতের আদেশের কপি থানায় পৌঁছলেও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি। এ ব্যাপারে থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার তিনি আদালতের আদেশের কপি হাতে পেয়েছেন। মামলা রেকর্ডের প্রক্রিয়া চলছে। বাগধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি জানান, থানার ওসির সাথে কথা বলে এলাকার শান্তির জন্য গণ্যমান্যদের নিয়ে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।