নগরীর কাটপট্টি রোড এলাকায় এক মৎস্য শ্রমিককে হাত-পা এবং মুখ বেঁধে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৯নং ওয়ার্ডের কাটপট্টি রোডে সাবেক কাউন্সিলর নোমান এর ছোট ভাই তুহিন এর বাড়ির ৪র্থ তলায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত মৎস্য শ্রমিক এর নাম খালেক মো. টিপু (৪০)। সে চট্টগ্রামের কর্নফুলী থানাধীন চর লক্ষিয়া এলাকার মো. সোলায়মান এর ছেলে। পুলিশের ধারনা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত টিপুর ছোট ভাই মো. মুনসুর জানান, তারা দুই ভাই বরিশাল পোর্ট রোডের মৎস্য ব্যবসায়ী আয়নাল বেপারী এবং চট্টগ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী ওসমানের আড়ৎ এর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এক আড়ৎ থেকে অন্য আড়তে ট্রাক যোগে মাছ পৌছে দেয়া তাদের কাজ। পাশাপাশি নগরীর কাটপট্টি এলাকার বাসিন্দা ও ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নোমান এর ছোট ভাই তুহিন এর মালিকানাধীন শুভরাজ নামক বাড়ির চতুর্থ তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকেন।
তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর পোর্ট রোড থেকে মাছ নিয়ে পিরোজপুরে যান। সেখান থেকে দুপুরের পরে পোর্ট রোডে মৎস্য অবতরন কেন্দ্রে ফিরে আসেন। তিনি সেখানে মৎস্য আড়তে থেকে গেলেও তার ভাই টিপু জামা কাপড় পাল্টাবার জন্য কাটপট্টি রোডে ভাড়া বাসায় যায়। ছোট ভাইকে বলে যায় ফিরে এসে দুজন এক সঙ্গে হোটেলে খাবেন।
এদিকে ঘরে ফেরার ঘন্টাখানেক পর টিপুর মোবাইল নম্বর থেকে তার মোবাইলে একটি কল আসে। এসময় সে জানতে চায় ড্রয়ারের চাবি কোথায়? চাবির কথা বলা মাত্রই ফোন কলটি কেটে দেয়। ফলে বিষয়টি তার কাছে সন্দেহজনক মনে হলে বড় ভাই টিপুর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও কেউ রিসিভ করেনি।
ছোট ভাই মনজুর আরো বলেন, ভাইর ফিরতে দেরী দেখে তিনি নিজেও কাটপট্টিতে তাদের ভাড়া বাসায় যান। সেখানে গিয়ে চতুর্থ তলায় তাদের ঘরের ভেতর থেকে ছিটকিনি আটকানো দেখে। অনেক ধাক্কা ধাক্কির পরে ছিটকিনি ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে ঘর অন্ধকার দেখতে পান। আলো জ্বালাতেই দেখতে পান একটি চেয়ারের সঙ্গে তার ভাইর হাত-পা এবং মুখ বাধা অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া তার গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানো। তাৎক্ষনিক সে নিচে নেমে ডাক-চিৎকার দিলে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। পরে বাঁধা অবস্থা থেকে উদ্ধার করে টিপুকে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগে রাত সোয়া ৯টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক টিপুকে মৃত ঘোষনা করেন।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ সহ মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজায় তালা লাগানো দেখা যায়। পরে থানা পুলিশ নিহত মৎস্য শ্রমিক এর ছোট ভাই মুনসুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতাল থেকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। এসময় বাড়ির মালিক সহ স্থানীয়দের সামনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. গোলাম রউফ খান-পিপিএম মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মো. আওলাদ হোসেন সহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা। তাছাড়া লাশ ময়না তদন্তের জন্য শেবাচিমের মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। আজ বুধবার নিহতের মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হবে।
অপরদিকে টিপুর বাসার নিচতলা অথাৎ তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়ার শিশু সন্তান জানান, কজন লোক টিপুকে হাত এবং মুখ বেধে চতুর্থ তলায় নিয়ে আসে। পরে তারা তাদের রুমের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এর ঘটনার পরেই টিপুকে হাত-পা এবং মুখ বেঁধে হত্যা করা হয়েছে বলে শুনতে পান বলে শিশুর মা জানিয়েছেন। ঘটনার পর তাদের শিশু সন্তানের মুখ থেকে ঘটনাটি জানতে পারেন। ততক্ষনে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। তবে যারা টিপুকে হাত ও মুখ বেধে ধরে নিয়ে আসে তাদের দেখলে শিশুটি হয়ত চিনতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মো. আওলাদ হোসেন বলেন, নিহতের ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাছাড়া তাকে সহ বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে যতটুকু জানা গেছে তাকে ঘটনাটি পরিকল্পিত। তবে অর্থনৈতিক নাকি অন্য কোন বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটনানো হয়েছে সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ওসি।